• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৩১-১০-২০২২, সময়ঃ সকাল ০৯:২৭

পীরগঞ্জের করতোয়ায় বালু লুটের মহাযজ্ঞ



পীরগঞ্জ(রংপুর)প্রতিনিধি ►

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা ভুমি অফিসের এমএলএসএস আরিফুল ইসলামও বালুখেকো। তিনি প্রায় ৩ বছর ধরে পীরগঞ্জের করতোয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। এলাকায় তিনি প্রভাবশালী। তার মতো আরও অনেকেই বালু তুলে লুট করছে। এ যেন মিলেমিশে বালু লুটের মহোৎসব চলছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন। অপরিকল্পিত ভাবে বালু লুটের ফলে রাস্তা, ঘাট, ফসলী জমি, বাড়ী ঘর ভাঙ্গলেও অসহায় সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, পীরগঞ্জের পশ্চিমে টুকুরিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদী। ওই নদীর চর এবং বুকে একাধিক জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীটির তলদেশ থেকে প্রতিদিনই অবৈধভাবে বালু লুটে নিচ্ছেন। নদীপাড়ের বেশ কয়েকটি স্থানে কোটি টাকা মুল্যের বালু মজুদ করে রাখা হলেও স্থানীয প্রশাসন রহস্যজনক কারণে কোন পদপে নিচ্ছে না। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও ড্রাম ট্রাকে বালু পরিবহনের কারণে পাকা ও কাঁচা রাস্তা ভাঙ্গছে, ভাঙ্গছে ফসলী জমি,বাড়ি ঘর। ফলে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এ যেন এক মগের মুলুক। জোর যার, মুল্লুক তার ! 

জানা গেছে, রংপুর-দিনাজপুর জেলার পীরগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাটের প্রায় ২৫টি গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। নদীটির তলদেশে বিভিন্ন স্থানে বোমা এবং স্যালোমেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনে নেতাদের মাঝে অনেকটা প্রতিযোগিতা চলছে বলা চলে। এতে নদীপাড়ের জমি, রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় ভুক্তভোগী এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে অসংখ্য লিখিত অভিযোগ করলেও প্রতিকার পায়নি। উল্টো নদীপাড়েই কোটি কোটি টাকা মুল্যের হাজার হাজার ট্রাক বালুর মজুদ করা হয়েছে। নদীটির টুকুরিয়া ইউনিয়নের জয়ন্তীপুর, দণি দুর্গাপুর, বিছনা, মোনাইলসহ কয়েকটি স্থানে অসংখ্য ড্রেজার, বোমা মেশিন, স্যালোমেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। 

এছাড়াও অন্যের জমি থেকেও জোরপূর্বক বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রায় ৩ বছর ধরে মোনাইল দুর্গাপুরে করতোয়া নদী থেকে পীরগঞ্জ উপজেলা ভুমি অফিসের কর্মচারী আরিফুল ইসলাম বালু উত্তোলন করছেন। তিনি উপজেলার জাফরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ভুমি অফিসে চাকরী করায় অনেকটাই বেপরোয়া। তার মতো ওই স্থানে বছরের পর বছর ধরে গোপীনাথপুরের নুর আলম যাদু, বিছনা গ্রামের আনোয়ার হোসেন, মাহে আলম, শাহিনুর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের চাচাতো ভাই সাইদুল ইসলাম, ভাটা ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বালু উত্তোলন করছেন। 

আরিফুল ইসলাম বলেন, আমার একটা ড্রেজার মেশিনে বালু তুলছি। সবাই তোলে আমিও তুলছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা জানান, বালু তোলার কারণে টুকুরিয়া ইউনিয়নের মোনাইল দূর্গাপুরে প্রায় ১ কিলোমিটার পাকারাস্তা পুরোটা ভেঙ্গে গেছে। প্রতিবাদ করলে হামলা, মামলার ভয় দেখানো হয়। তাছাড়াও বালু উত্তোলন বন্ধ, রাস্তা ও জমি রায় একাধিকবার মানববন্ধনও করা হয়েছে। অথচ কোন কিছুতেই কোন কাজ হচ্ছে না। 

টুকুরিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান রহমান মন্ডল বলেন, যারা নদী রা কমিটির সদস্য তারাই তো বালু তুলছে। প্রতিবাদ করায় আমার ভাই মান্নান মন্ডলকে হামলা করেছিল।

ইউএনও বিরোদা রানী রায় বলেন, আইনকে মান্য করা একজন নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। কিন্তু যারা তা অমান্য করে, তাদের বিরুদ্ধে (বালু উত্তোলন বন্ধে) ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। অবশ্য প্রায় এক বছর ধরে ওই এলাকায় কোন প্রকার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে না রহস্যজনক কারণে।

এলাকাবাসীর প্রশ্ন হলো, হামরা কি জমি, বাড়ী, রাস্তা রা করতে পারবো না ?  বন্ধ হবে না কি বালু উত্তোলন ?