• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৩-১১-২০২২, সময়ঃ বিকাল ০৩:০৯

পীরগঞ্জে বালু লুট, ড্রাম ট্রাকে পরিবহন



পীরগঞ্জ(রংপুর) প্রতিনিধি ►

রংপুরের পীরগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে বালু লুটের ঘটনায় জড়িত ভুমি অফিসের কর্মচারী আরিফুল ইসলাম আরিফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বালু না তোলার মুচলেকা দিয়ে নিস্কৃতি পেয়েছেন। এখন তিনি পুর্বের তুলনায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। দিনের পরিবর্তে রাতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তার মতো দেদারছে বালু লুটছে প্রভাবশালীরাও। করতোয়া নদীতে প্রায় অর্ধশত স্থানে বোমা ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত বালু উত্তোলন চলছে। স্থানীয় প্রশাসনও বালু লুটেরাদেরকে রুখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। 

উপজেলার পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীর ধার ঘেঁষে চতরা, বড়আলমপুর ইউনিয়নের অর্ধশত স্থানে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর মধ্যে টুকুরিয়া ইউনিয়নে বালু লুটের মহাযজ্ঞ চলছে। টুকুরিয়ার দুর্গাদহ’ ছাতুয়া নামক স্থানেই ১০ টিরও বেশি বোমা মেশিনে দিবারাত্র বালু উত্তোলন চলছে। ফলে রাস্তা, ঘাট, ফসলী জমি,পুকুর ও বাড়ী ঘর ভাঙ্গছে।

কেউ প্রতিবাদ করলেই লুটেরার দল হামলা মামলার হুমকি দিচ্ছে। জানা গেছে, পীরগঞ্জে সরকারিভাবে বালুমহল না থাকলেও করতোয়া নদীর তলদেশ, চর এবং নদীপাড়ের অন্যের জমি থেকে প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলন করছে। মজার ব্যাপার হলো, যারা বালু হরিলুট করছে, তাদের কারো এক শতাংশ জমিও নেই নদীপাড়ে। শুধু মতা প্রয়োগ করে কৃষকের সর্বনাশ করে দিনেরাতে বালু লুটে নিচ্ছে। অনেক কৃষক ইতিমধ্যে সর্বশান্ত হয়েছেন।

পাশাপাশি উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের যে ক'টি সড়কের উপর দিয়ে বালু পরিবহন করা হচ্ছে, সে এলাকায় আন্তঃযোগেযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ফেটে ভেঙ্গে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে সড়কগুলো। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও ড্রাম ট্রাকে বালু পরিবহনের কারণে পাকা ও কাঁচা রাস্তা ভাঙ্গছে, ভাঙ্গছে ফসলী জমি, বাড়ি ঘর। ফলে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। এ যেন এক মগের মুল্লুুক। 

পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিরোদা রানী রায় অভিযান চালিয়ে কয়েকটি স্যালোমেশিন ভাংচুর ও মামলা করার পর ড্রাম ট্রাকে বালু পরিবহন নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। যে কারনে বর্তমানে দিনের পরিবর্তে রাতে ড্রাম ট্রাকে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। কিন্তুু বালু লুট বন্ধ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যাচ্ছেন লুটেরার দল। 

জানা গেছে, রংপুর-দিনাজপুর জেলার পীরগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাটের প্রায় ২৫টি গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। নদীটির তলদেশে বিভিন্ন স্থানে বোমা এবং স্যালোমেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনে নেতাদের মাঝে অনেকটা লুটপাটের প্রতিযোগিতা চলছে। নদীপাড়েই কোটি কোটি টাকা মুল্যের হাজার হাজার ট্রাক বালুর মজুদ রযেছে। প্রায় ৩ বছর ধরে মোনাইল দুর্গাপুরে করতোয়া নদী থেকে পীরগঞ্জ উপজেলা ভুমি অফিসের কর্মচারী আরিফুল ইসলাম বালু উত্তোলন করছেন।

তিনি উপজেলার জাফরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। পীরগঞ্জ ভুমি অফিসে চাকরী করায় অনেকটাই বেপরোয়া তিনি। বালু পরিবহন করতেই আরিফ ৩ টি ট্রাক ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। তার মতো ওই স্থানে বছরের পর বছর ধরে বিছনা গ্রামের আনোয়ার হোসেন, মাহে আলম, শাহিনুর রহমান, সাইদুল ইসলাম, ইটভাটা ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বালু উত্তোলন করছেন। ভাটা ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার বালু তোলা বন্ধ আছে। তবে অনেকেই বালু তুলছে। 

উপজেলার মিঠিপুর ইউনিয়ন ভুমি অফিসের কর্মচারী আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, আমি আর বালু তুলবো না বলে ইউএনও স্যারের কাছে মুচলেকা দিয়েছি। শুধু আমার নিজস্ব ৩টি ট্রাক ভাড়ায় বালু পরিবহন করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা জানান, আরিফ প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলে না। সে এখন রাতে বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। তারা আরও বলেন, বালু তোলার কারণে টুকুরিয়া ইউনিয়নের মোনাইল দূর্গাপুরে প্রায় ১ কিলোমিটার পাকারাস্তা পুরোটা ভেঙ্গে গেছে।

তাছাড়াও বালু উত্তোলন বন্ধ, রাস্তা ও জমি রায় একাধিকবার মানববন্ধনও করা হয়েছে। কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। ইউএনও বিরোদা রানী রায় বলেন, বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন সহকারী তহশিলদার নুর আলম বাদী হয়ে মামলা করেছে। চিহ্নিত কয়েকজনের নামে মামলা হলো না কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।