- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ২৬-২-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১১:২১
নীলফামারীতে কলা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা
নীলফামারী প্রতিনিধি ►
নীলফামারীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কলার চাষ। বাড়ির পাশের পতিত জমি, পুকুরের পাড়, এমনকি ফসলি জমিতেও কৃষকেরা চাষ করছেন কলা। বাজারে এর চাহিদা থাকায় ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় বাড়ছে কলা চাষ। ইতিমধ্যে অনেকে কলা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কৃষকেরা বেশি লাভের আশায় কলার জমিতে চাষ করছেন সাথী ফসল। দেশের অন্য অঞ্চলের মতো নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রিয় হচ্ছে মিশ্র পদ্ধতিতে সাথী ফসল চাষ। জেলায় এবছর ১৭২ হেক্টর জমিতে কলার চাষ করা হয়েছে। চাষিরা বলছেন, এক মৌসুমে একই সময়ে জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। জেলার অনেক কৃষক কলার জমিতে আলু, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়া, বেগুনসহ বিভিন্ন প্রভৃতি চাষ করে তারা লাভবান হচ্ছেন।
জেলা সদরের পলাশবাড়ী এলাকার নলনী কান্ত রায়। একসময় ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হতো, তাতে কোনোমতে সংসার চলতো তার। তবে টানাপোড়েনের সংসারে কলা চাষ করে বদলে গেছে নলনীর জীবন। এখন আর আগের মতো সংসারে অভাব নেই বললেই চলে। শুধু নলনীই নয়, তার মতো কলা চাষে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে।
চাষি নলনী কান্ত রায় বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে কলা গাছ লাগিয়েছি। কলা েেতর মধ্যে আলু লাগিয়েছি। আলু উঠলে মরিচ লাগাবো। প্রাকৃতিক কোনো কারণে তে নষ্ট না হলে প্রতি বিঘায় লাধিক টাকার কলা বিক্রি করা যাবে। এরই মধ্যে আলু বিক্রি করার উপযোগী হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর ধরে এই কলা চাষ করে আমার সংসারের অভাব দূর হয়েছে।’
একই এলাকার কলা চাষি মিজানুর রহমান বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে কলা চাষের জন্য ৩০০-৩৫০ কলার চারা রোপণ করা যায়। বিঘাপ্রতি খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়লে লাভ হয় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। গাছ লাগানো থেকে শুরু করে ১১ মাসের মধ্যে কলা কাটা যায়। তা ছাড়া একবার কলার চারা রোপণ করা হলে তিন বছর ভালোভাবে ফলন দিতে পারে, যা অন্য কোনো ফসলের েেত্র সম্ভব নয়। তাই অন্যান্য ফসল অল্প কিছু আবাদ করে কলার চাষের দিকেই বেশি মনোযোগী হয়েছি।
লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের বেলতলী এলাকার চাষি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে সবজির দাম কিছুটা কম হলেও আলু বিক্রি শেষে ওই েেতই মিষ্টিকুমড়া অথবা শাক জাতীয় ফসল চাষ করে প্রতি বিঘায় ১০-১২ হাজার টাকা পাওয়া যেতে পারে। চুক্তিভিত্তিক নেয়া জমিতে কম সময়ে, কম জমিতে এক মৌসুমে বেশি ফলন পেতে একাধিক ফসল চাষ করছি।’ নিমতলী এলাকার মকিলা বেওয়া বলেন, ‘আমার স্বামী সারাবছর বাহিরে (ইট-ভাটায়) কাম করে। দশ বছর থেকে কলা আবাদ করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। কলা আমাদের একমাত্র আবাদ। কলা চাষে লাভ ভালো আছে।’
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় দিন দিন কলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। সাথী ফসল চাষ জমিতে বেশি আয় করার একটি কৌশল। লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা কলার জমিতে সাথী ফসল চাষ করছেন। কৃষি বিভাগ চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।’