• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১-৯-২০২৩, সময়ঃ রাত ০৭:০০

নারী শ্রমিকরা মজুরি পান পুরুষের চেয়ে অর্ধেক 



এ মান্নান আকন্দ, সুুন্দরগঞ্জ ►

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় কৃষি কাজে নারী শ্রমিকরা এগিয়ে। কিন্তু মজুরি বৈষ্যমের শিকার হয়ে অনেকে কৃষি কাজ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। সে কারনে চলতি আমন মৌসুমে ধান ক্ষেতের আগাছা পরিস্কার করার কাজে শ্রমিকের সংকটে পরেছে কৃষকরা। পুরুষ শ্রমিকের অর্ধেক মজুরি দেয়া হচ্ছে নারী শ্রমিকদের। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা এবং নারী শ্রমিকের মজুরি ২৫০ টাকা। কেন এই বৈষ্যম তার কোন  স্বদুত্তর নেই কৃষকদের কাছে। বর্তমান বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির বাজারদরের সাথে তুলনা করে নারী শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানান তারা।

উপজেলা কৃষি ও উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান মোতাবেক ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভায় নারী শ্রমিকের সংখ্যা ২ হাজার ৫০০ জন। এরমধ্যে কৃষি কাজের নারী শ্রমিক ২ হাজার এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের জোগালি কাজের নারী শ্রমিক ৫০০ জন। তবে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি।   

উপজেলায় এখন কৃষি কাজের জন্য পুরুষ শ্রমিক নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেনির কৃষক তাদের আবাদি জমি নিন্মবিত্ত শ্রেনির কৃষকদের নিকট বর্গা দিয়ে চাষাবাদ করছে। মধ্য এবং নিন্মবিত্ত শ্রেনির কৃষকরা নিজেই তাদের এবং বর্গা নেয়া জমি চাষাবাদ করে আসছে। তাছাড়া যান্ত্রিকরণের এই যুগে অনেকে যন্ত্রের সাহায্যে চাষাবাদ করছে। কিন্তু সব কাজেই শ্রমিক দরকার হচ্ছে। শতকরা ৮০ ভাগ পুরুষ শ্রমিকরা এখন অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। তারা আর কৃষি কাজ করছে না। সে কারনে কৃষি কাজ ধানের চারা রোপন, আগাছা পরিস্কার এবং কাটামাড়াই করছে নারী শ্রমিকরা।

সোনারায় ইউনিয়নের পূর্ব সোনারায় গ্রামের নুরজাহান বেগম বলেন, সকাল ৯টা হতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ক্ষেতে কাজ করার পর তাদেরকে মজুরি দেয়া হয় ২৫০ টাকা। যা পুরুষ শ্রমিকরে অর্ধেক, এটি তাদের উপর অন্যায় করা হচ্ছে মর্মে দাবি করেন তিনি। মজুরি বৈষ্যম হতে পারে, তবে অর্ধেক মজুরি বৈষ্যম নারীর প্রতি অন্যায় করার শামিল। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির বাজারদর বৃদ্ধিসহ পেটের দায়ে মাঠে ঘাটে কাজ করতে হচ্ছে। বাড়ির কর্তার একার রোজগার দিয়ে বর্তমানে সংসার চালানো অনেক কষ্টকর। 

তারাপুর খোদ্দার চরের ফুলমতি বেগম জানান, চরে নারী শ্রমিকের সংখ্য অনেক বেশি। চরের পুরুষরা বেশিভাগ সময় শহরে গিয়ে রাজমিস্ত্রীর যোগালি এবং রিস্কা-ভ্যান চালান। সে কারনে নারীরা দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালান। তিনি দুঃখ করে বলেন, সারাদিন ঘাঁধা খাটনির পর তাদেরকে মজুরি দেয়া হয় ২৫০ টাকা যা, পুরুষ শ্রমিকের অর্ধেক। মানবিক দিক বিবেচনা করে মজুরি বাড়ানোর দাবি তাদের।

সোনারায় ইউনিয়নের কৃষক জাহিদুল ইসলাম জানান, নারী শ্রমিকরা তুলনামুলকভাবে পুরুষ শ্রমিকরে চেয়ে কাজ কম করেন। সে কারনে তাদেরকে মজুরি কম দেয়া হয়। অনেক কৃষক পুরুষ শ্রমিকের মজুরির অর্ধেক দেয় আবার অনেকে একটু বেশি দেয়। তবে বর্তমান সকল জিনিসের দাম বেড়ে গেছে, সে তুলনায় নারী শ্রমিকের মজুরি বাড়ানো উচিত। তিনি সত্যতা স্বীকার করে বলেন বর্তমানে কৃষি কাজে নারী শ্রমিকরা এগিয়ে রয়েছে। পুরুষরা এখন আর কৃষি কাজ করতে চায় না।

নারী নেত্রী ও সুন্দরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ নাসরিন সুলতানা বলেন, নারীদের সমাধিকার আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এটি বাস্তবায়নে পুরুষদেরকে আন্তরিকতার সহিত এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে নারী শ্রমিকরা তাদের অধিকার কোনদিন বাস্তবায়ন করতে পারবে না। নারী শ্রমিকদের উপর অনেক বড় অন্যায় করা হচ্ছে। মজুরি বৈষ্যম দূর করার জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। সকল স্তরের পক্ষ হতে এ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আরেফীন খান জানান, উপজেলায় বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কমপক্ষে ৫০০ জন নারী শ্রমিক কাজ করে থাকেন। তবে অবকাঠামো, রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণ কাজের নারী শ্রমিকরা কৃষি কাজ করেন না।

উপজেলা কৃষি অফিসার রাশিদুল কবির জানান, উপজেলায় কৃষি কাজে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ জন। কৃষি কাজে এখন সবত্রই নারী শ্রমিকের অবাধ বিচরন। ধানের চারা রোপন, আগাছা পরিস্কার, ধান কাটামাড়াই, পাটের আঁশ ছড়ানো, পাটকাটি শুকানোর কাজও নারী করে থাকেন। তবে এটি সত্য কাজের তুলনায় নারী শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম দেয়া হয়। সময়ের সাথে তালমিলিয়ে তাদের মজুরি বাড়ানো একান্ত দরকার। তা নাহলে নারী শ্রমিকরা কৃষি কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।