• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৫-১২-২০২২, সময়ঃ সকাল ১০:৫০

নওগাঁয় ১৩ বছরের সংসার ছেড়ে অনত্র বিয়ে সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে উল্টো দেনমোহর মামলা



আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ  ►

নওগাঁর মহাদেবপুরে ১৩ বছরের সংসার জীবনে দুই কন্যা সন্তানকে রেখে পরকিয়ায় জড়িয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন গৃহবধু জুলেখা আকতার ওরুফে জনি বানু (২৮)। অনত্র বিয়ের প্রায় দুই বছর পর স্বামী ও ছেলে সন্তান হওয়ার পরও সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে দেনমোহর দাবী করে আদালতে মামলা করেন তিনি। বর্তমানে ওই গৃহবধু উপজেলার জন্তিগ্রাম গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী এবং পার্শ্ববতী আজিপুর গ্রামের আব্দুল জলিল এর মেয়ে। 

স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৩ বছর আগে মহাদেবপুর উপজেলার চকরাজা গ্রামের আফাজ উদ্দিন মন্ডলের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৩০) বিয়ে করে জুলেখা আকতার কে। বিয়ের পর তাদের সংসারে দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ের বয়স ১১ বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স ৬ বছর। প্রায় আড়াই বছর আগে উপজেলার জন্তিগ্রাম গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান এর সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এই সম্পর্কের সূত্রে গত ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর গভীর রাতে বাড়িত থেকে কাউকে না জানিয়ে বেরিয়ে যান জুলেখা আকতার। অনেক খোজাখুঁজি করে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে সিরাজুল ইসলাম জানতে পারেন তার স্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান নামে একজনের সাথে ঢাকায় বসবাস করছে।

জুলেখা আকতার এর গর্ভ থেকে দুইটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হলেও একমাত্র মেয়ে তামান্না’র (৬ বছর) কথা উল্লেখ করে নিজের কাছে রাখতে গত ২৫/৪/২২ ইং তারিখে বাদী হয়ে ৩নম্বর নওগাঁ আমলী আদালতে সাবেক স্বামী সিরাজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে মামলা করেন। গত ১৮/১০/২২ তারিখে আবারও দেন মোহর বাবদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং মেয়ে তামান্নার ভরন পোষণ বাবদ প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা নিতে পারিবারিক আদালতে সিরাজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে মামলা করেন। 

মামলার বাদী গৃহবধু জুলেখা আকতার বলেন, আগের স্বামীর সংসার থেকে চলে আসার পর অন্যত্র বিয়ে করেছি। প্রায় ২ বছর ঢাকায় থাকার পর বর্তমানে বাবার বাড়িতে এসেছি সন্তান হওয়ার জন্য। ছেলে সন্তান হয়েছে বয়স প্রায় একমাস। নাম দিয়েছি মো.ওয়ালিউল্লাহ। আগের পক্ষের ছোট মেয়ে তামান্না আমার সঙ্গে থাকে। তবে মামলার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননা। জুলেখা আকতারের মা ঝর্ণা বিবি তার মেয়ের অন্যত্র বিয়ে হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়ে এখন সুখেই আছে। মেয়ের ছেলে সন্তান হয়েছে।

গৃহবধু জুলেখা’র বর্তমান শশুর নজরুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বিয়ে করে ঢাকায় থেকে পোশাক কারখানায় কাজ করে। বিয়ের পর থেকে ছেলে বাড়ি আসেনি। আমার পরিবার থেকে ছেলের বউকে মেনে নেয়া হয়নি। শুনেছি এক ছেলে সন্তানও হয়েছে।

গৃহবধুর চাচী চুমকি ও প্রতিবেশি জিল্লুর রহমান বলেন, আগে বিয়ে (জুলেখা আকতার) হয়েছিল চকরাজা গ্রামে। সংসারে কলোহ হওয়ায় তাদের মাঝে ছাড়াছাড়ি হয়। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগীতায় আবারও তাদের বিয়ে হয়ে সংসার শুরু করে। এরইমধ্যে মেয়ে অন্য জায়গায় এক ছেলেকে ভালবাসে। পরে ভালবেসে ওই ছেলেকে (মোস্তাফিজুর রহমান) বিয়ে করে জন্তিগ্রাম গ্রামে। সে পক্ষের এক ছেলে সন্তান হয়েছে। বাচ্চার শ্বাসকষ্ট সমস্যা হওয়ায় প্রায় বাজারে পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। আগের পক্ষের স্বামীর বড় মেয়ে তার বাবার কাছে এবং ছোট মেয়ে ভাতিজির কাছে থাকে।

সাবেক স্বামী সিরাজুল ইসলাম বলেন, যে দিন বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে যায় সেদিন নগদ প্রায় ৬০ হাজার টাকা ও তিনটি ছাগল নিয়ে যায়। রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। আমি তালাক দেয়নি তাকে। আর কোন তালাকনামাও পাইনি। আমাকে হয়রানি করে টাকা নিতে চায় বা আমার ক্ষতি করায় হয়তো তার উদ্দেশ্য।

গৃহবধুর সাবেক শশুর আফাজ উদ্দিন বলেন, একমাত্র ছোট মেয়েকে (আমার নাতনী) তার কাছে রাখতে আমার ছেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। অন্যত্র বিয়ে ও সেপক্ষের কোন সন্তান হয়নি অস্বীকার পরে আবারও দেনমোহর নিতে মামলা করে। আমার ছেলেকে হয়রানি করতে আদালতে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।

মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার পাঞ্জু সরদার বলেন, গৃহবধু জুলেখা আকতার এর আগের সংসারে কলোহ হতো। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশও হয়েছে। শুনেছি সেখানে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। পরে অনত্র গৃহবধুর বিয়ে হয় এবং সন্তানও হয়েছে।