- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ২৯-৪-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৯:৪৫
ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত ফুলছড়ির কৃষকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক ►
সোনালী ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত এখন ফুলছড়ি উপজেলার কৃষকরা। পুরোদমে ধান কাটা মারা শুরু না হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে চান কৃষকরা যদিও এবার শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে।
উপজেলার উদাখালী ইউনিয়নের দণি বুড়াইলে গ্রামের কৃষক সবুরুদ্দিন মিয়া বলেন, এবারে আবহাওয়া মোটামুটি ভালো এবং ফলনো ভালো হয়েছে ধানের তেমন কোন সমস্যা নাই। সরকার যে ধানের দাম দিয়েছে সে দাম যেন আমরা পাই তাহলে আমরা কৃষকরা লাভবান হব ।
কৃষি শ্রমিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আগাম জাতের কিছু ধান কাটা মারা শুরু হলেও পুরোদমে কাটা মারা শুরু হতে আরো সপ্তাহ খানেক লাগবে। প্রতি বিঘা ধান কাটা মারায় আমরা খরচ নেই চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা, এক বিঘা জমি ধান কাটতে আমাদের চার থেকে পাঁচটা কামলা লাগে। এ মৌসুমে আমাদের প্রতিজনের ইনকাম প্রতিদিন গড়ে আসে এক হাজার থেকে বার শত টাকা।
একই গ্রামের কৃষক মনু মিয়া, রহিম মিয়া ও আব্দুল গণি বলেন, গত বছর এক বিঘা ধান কাটতে টাকা লেগেছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা, এবছর এক বিঘা ধান কাটতে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগছে সব কিছুর দাম বারার সাথে সাথে ধান কাটামরার দামও বেরে দের গুন হয়েছে। চলতি মৌসুমে জমি তৈরি, সেচ, বীজ, কীটনাশক ও কাটাইমারাই মিলে বিঘা প্রতি একজন কৃষকের খরচ দাঁড়িয়েছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা আর বিঘা প্রতি গড় ধান উৎপাদন হয়েছে বাইশ মন। সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্য ৩০ টাকা কেজি দরে যদি কৃষক ধান বিক্রি করতে পারে তাহলে প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকের লাভ হবে ছয় থেকে আট হাজার টাকা। তবে সরকারি গুদামে ধান দিতে নানা ঝুঁকি ঝামেলার অভিযোগ রয়েছে কৃষকদের।
এপ্রিলে তাপ প্রবাহের মতো দুর্যোগ থাকলেও তা উৎপাদনের ল্যমাত্রা পূরণে বাধা হবে না। তাই কৃষকদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা। দেশে ৫৪ শতাংশ ধানের যোগান আসে বোরো মৌসুম থেকে আর এর একটি বড় অংশ উৎপাদন হয় উত্তর অঞ্চলে ।
ফুলছড়ি উপজেলার চালকল গুলোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ধান চলে আসবে এসব চালকলে তারপর চাল উৎপাদন হয়ে সরবরাহ হবে বিভিন্ন জেলায়। ব্যবসায়ীরা বলছে সরকার প্রতি কেজি চালের দাম ৪০ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন তাতে লাভবান হবে ব্যবসায়ী, সরকার উভয় পই আর ধানের দাম ৩০ টাকায় কৃষকও লাভের মুখ দেখবে।
গাইবান্ধা জেলা চাল কল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান বাদল জানান, যদি সরকার ধানের মজুতকে যথাযথ মনিটরিং করে তাহলে আমি মনে করব কৃষক এবং মিলাররা উপকৃত হবে। এখানে যথাযথ মনিটরিং এর একটা প্রক্রিয়া হলো আমরা মনে করি ধান থাকবে কৃষকের কাছে পিলারের কাছে সরকারের কাছে এখানে মনিটরিং একটা প্রক্রিয়া ধান থাকবে কৃষকের কাছে, সরকারের কাছে, মিলাদের কাছে। গেল কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও চাল সংগ্রহের ল্যমাত্রা কিছুটা পূরণ করা গেলেও ধান সংগ্রহের ল্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তবে এবছর ধানের দাম ৩০ টাকা আর সিদ্ধ চালের দাম ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ফুলছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্য ইব্রাহিম আকন্দ সেলিম বলছেন ,ধান সংগ্রহ অভিযান সফল করতে হলে তৃণমূল পর্যায়ের কৃষকদের সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি পদ্ধতিগত পরিবর্তন জরুরী তা না হলে এই বাজার থাকবে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দখলে। সরকারের নীতিমালায় কৃষকের কোন লাভ হবে না এটা মধ্যস্বত্তভোগী ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের হাতে কারণ বোরো ধান যে পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে সারাদেশে তাতে প্রায় তিন কোটি সত্তর ল মেট্রিক টন, আর সরকার কিনবে ৪ ল মেট্রিক টন ধান।
গাইবন্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধান রোপণের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ২০৫ হেক্টরে। ল্য মাত্রা থেকে ৭৪৫ হেক্টর কম আবাদ হয়েছে।
এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৫ হাজার ৬৭৫ হেক্টর, সদরে ২১ হাজার ৬৯, পলাশবাড়ি ১২ হাজার ৬১৭, সাদুল্লাপুরে ১৬ হাজার ৫৮০, গোবিন্ধগঞ্জে ৩১ হাজার ১২৪, সাঘাটায় ১৪ হাজার ৯১২, ফুলছড়িতে ৬ হাজার ২২৮ হেক্টর জমিতে আবাদ রয়েছে। এসব জমিতে ব্রি ২৮, ব্রি ৫০, ব্রি ৮১, সুরবিসহ কয়েক জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ব্রি ২৮ ধান ও ব্রি ৮১ ধানে মারাত্মকভাবে ব্লাস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। যা কৃষদের ব্যাপক ভাবে তিগ্রস্ত করছে। এবছর ৫ লাখ ৬২ হাজার ৮১৯ টন ধান উৎপাদনের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ ।