• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৫-২-২০২৪, সময়ঃ সন্ধ্যা ০৬:০৮

দিনাজপুরের বিরলে বাড়ছে গোলাপ চাষ



সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর

চলতি মাসেই রয়েছে  বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে বরণ করতেই দিনাজপুর বিরলের গোলাপ ফুল চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন । মাত্র ৬ বছরেই জেলার বিরলের কাজী পাড়ায় ফুল চষে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাত্র ৪টি গোলাপ ফুলের চাষ করেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলেছে গোলাপ ফুলচাষীরা। 

শীতকালীন সময়ে প্রতিটি গোলাপ ফুলের বাগানে লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ , হলুদ গোপাল, কালো গোলাপসহ ১৪ প্রকারের গোলাপ ফুলের সমারোহে ভরে গেছে । গোলাপ ফুল দৈনন্দিন বিক্রি করে প্রতিদিন নগদ টাকায় পাওয়ায় গোলাপ ফুল চাষে অনেক চাষীরা এখন গোলাপ ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছে । 

জেলার বিরলের কাজীপাড়ায় এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনাথীরা এই গোলাপ ফুলের বাগানে এসে সেলফি , ছবি , ভিডিও চিত্র ধারন করে নিয়ে যাচ্ছে । গোলাপ ফুলের বাগানে সফলতা পাওয়ায় গোলাপ ফুল চাষীরা পাশাপাশি রজনীগন্ধা, গেনন্দা , কাঠ বেলি, গাঁদা ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় এ সব ফুলের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে । গোলাপ ফুলের চাষ করে বেশ লাভবান হওয়ায় এই গ্রামে আরোও গোলাপ ফুলের বাগান তৈরীর পরিকল্পনা করছেন অন্যান্য চাষীরা 

দিনাজপুর বিরলের কাজীপাড়ায় গোলাপ ফুলের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই গ্রামটি এখন গোলাপ ফুলের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এই কাজীপাড়া গ্রামে বর্তমানে চারটি গোলাপ ফুলের বাগান রয়েছে । ফুল আবাদ করে কৃষকরা অধিক লাভের মুখ দেখছেন। গোলাপ ফুল চাষ করে স্বল্প সময়ে অধিক পরিমানে লাভবান হওয়ায় দিনাজপুর বিরলে আরোও চাষীরা এখন বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ ফুল চাষে ঝুকে পড়েছেন। গোলাপ বাগান থেকে প্রতিটি গোলাপ ফুল ৬ থেকে ৭ টা পিচ হিসাবে বিত্রিু হচ্ছে । এতে করে একজন ফুলচাষী প্রতিদিন ১ হাজার ৫ শত থেকে ২ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করছেন । 

গোলাপ ফুল চাষী রফিকুল ইসলাম জানান ,গত ৬ বছর আগে স্থানীয় আতাউর রহমান নামে এক ফুলচাষী অনুপ্রেরনায় বিরলের কাজী পাড়ায় ৩৩ শতক জমিতে প্রথম গোলাপ ফুলের চাষী শুরু করেন। এখন এই গোলাপ ফুলের চাষ করেই তিনি লাভভান হয়েছেন এবং আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা  ফিরে পেয়েছেন । তিনি বলেন , প্রতিদিন ১ হাজার ৫ শত থেকে ২ হাজার  টাকা আয় হচ্ছে । এই আয় দিয়ে আমার দুই মেয়েকে রাজশাহীতে লেখাপড়া করাচ্ছি এবং আমার পরিবার ভালভাবেই চলছে । 

একই গ্রামের ফুল চাষী  জাহাঙ্গীর আলম বলেন , ফুলের ব্যবসা করে বর্তমানে অনেক ফুলচাষীরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে । গোলাপের পাশাপাশি  গাদা, গোলাপ, রজনী গন্ধা, বেলী ও কাঠ বিড়ালীসহ বিভিন্ন প্রকার ফুল আবাদ করছি । 

বিরলের রবিপুর এলাকার ফুলচাষী শমশের জানান, তিনি ৮ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক ফুলচাষ করেন। ফুলের ভালো ফলন হওয়ায় তিনি বেশ লাভবান তাতে। তিনি আগামীতে এক বিঘা জমিতে ফুলচাষের প্রস্তুস্তি নিচ্ছেন।

কাজী পাড়ার  মোকাররম হোসেন ও মকছেদ আলীর ভাগ্য বদলে দিয়েছে ফুল চাষ। অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ফুল চাষ করেছেন তারা। সেই ফুল বাগান থেকে তারা বছরে আয় করছেন দুই লাখ টাকা। মকছেদ আলী’র বর্তমানে এক বিঘা ৮ শতাংশ জমিতে রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁধা ও গাজরা ফুল চাষ করছেন। বাড়ির পাশে ৯ শতাংশ জমিতে রয়েছে গাজরা ফুল। এছাড়া মোকাররমের এক বিঘা ৫ শতাংশ কাঠা জমিতে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা ও গাঁধা ফুল।

মকছেন আলী বলেন, ফুল চাষে লোকসানের সম্ভাবনা নেই। ঠিকমত পরিচর্যা ও চাষ করতে পারলে প্রচুর লাভ হয়।

ফুলের বাজার দর কম-বেশি হয় জানিয়ে মোকাররম বলেন, ‘প্রতি পিচ গোলাপ বিক্রি করি ৫ টাকা, রজনীগন্ধা ৬ টাকা ও গাঁধা ফুল ১ হাজার ১৫শত টাকা। প্রতিদিন বিক্রি করা দামের তারতম্য ঘটে। বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের দাম বেশি হয়।’ প্রতিদিন ফুল কেনার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে নগদ টাকায় জমি থেকে ফুল কিনে নিয়ে যায়। ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং লাভজনক ফসল হওয়ায় অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকও ফুল চাষে ঝুকছেন। 

বিরলের রানীপুকুর ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম ফরিদ বলেন , শুধু মাত্র কাজীপাড়ায় ফুলের চাষ হচ্ছে । ফুলচাষীদের মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ফুল চাষের বিভিন্ন পরামর্শ ও ফুলের কাটিং বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষন প্রদান করায় এই গ্রামের ফুলের আবাদ ভাল হচ্ছে। ফুলের চাষ করেই ফুল চাষীরা এলাকায় বেশি পরিচিত লাভ করেছে । পাশাপাশি আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছে । 

দিনাজপুর  বিরল কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা গেলাম মোস্তফা ইমাম বলেন, বর্তমানে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ফুল চাষীদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষন , প্রনোদনা প্রদান করা হচ্ছে । ফলে এই কাজীপাড়ায় আরোও কয়েকজন চাষী ফুল চাষে  আগ্রহী হয়ে উঠছে । এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য দারুন উপযোগী। ধানের জেলা দিনাজপুরে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। এ ফুল চাষ করে ঘুরছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা।