• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৩-৯-২০২৩, সময়ঃ দুপুর ১২:৫৮

ডিমলায় সরকারি জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ



শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পওর বিভাগে বেদখল হয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি। ভূমিদস্যু একটি চক্র সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করেছে। শুধু তাই নয়, দখল করা জমিতে মার্কেট নির্মাণ করে নিজেরা ব্যবসার পাশাপাশি দোকান ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

এ ছাড়াও মার্কেটের দোকান সহজ সরল মানুষের কাছে বিক্রিও করছে। এতে সরকার প্রতি বছর কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাউবোর জমি উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরবতা পালন করছে। যা জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করছে।

ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চাপানির হাটে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের শাখা অফিসের সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ঝুনাগাছ চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নে চাপানির হাট একটি আদি ও ঐতিহ্যবাহী হাট। এ হাটে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা ছাড়াও হাট বাজারের জায়গা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ কিছু জায়গা-জমি রয়েছে। হাটের কেন্দ্রস্থল এবং কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সামনে পাউবোর এসব জায়গা দখল করে গত কয়েক মাস আগে থেকে গড়ে তোলা হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন মার্কেট। 

এই মার্কেটের পাঁচটি বড় সাইজের দোকান এরইমধ্যে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। নেওয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের জামানত। এ ছাড়া বড় সাইজের আরও পাঁচটি দোকান বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। এ ছাড়াও নির্মাণাধীন মার্কেটের সামনে রয়েছে ডালিয়া-পাগলাপীর মহাসড়ক। মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে ইতোপূর্বে নির্মাণ করেছে ৩০-৩৫টি দোকান ঘর। নিয়মিত যার মাসিক ভাড়া ওঠানো হয় ৪০/৫০ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ টাকা চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত তহবিলে জমা হয়।

অথচ পাউবো কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর এই সকল জমির খাজনা বাবদ লাখ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব খাতে জমা দিয়ে আসছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে দিন দিন স্থানীয় প্রভাবশালীরা এভাবেই গড়ে তুলছেন ভবন, ইমারত ও দোকানপাট।

যারা এসব পাকা ইমারত তৈরি করছেন তারা সকলেই স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। রহস্যজনক কারণে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এগুলো দেখেও দেখে না। শুনেও শোনে না। দ্রুত এসব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি জায়গা দখল মুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

এই এলাকায় পাউবোর জায়গায় অস্থায়ীভাবে বসবাসকারীদের অভিযোগ, তারা দীর্ঘদিন ধরে পাউবোর জায়গায় অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে বসবাস অথবা ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছেন। তবে, তারা পাউবোর জায়গায় স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করার সাহস পাননি। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালী ও ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে পাউবোর জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। পাউবো কর্তৃপক্ষও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এই অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে অন্যরাও পাউবোর জায়গা দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ শুরু করবে বলেও জানান তারা।

ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় অনেকেই স্থাপনা তৈরি করেছে, আমিও করেছি। তাতে দোষের তো কিছু নাই। কর্তৃপক্ষ যেখানে কিছু বলছেনা সেখানে আপনাদের এত মাথা ব্যথা কেন?

নীলফামারীর ডিমলা পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য এরইমধ্যে আমরা নোটিশ করেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওনারা ভেঙে না নিলে, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করব। পাউবোর জায়গায় অবৈধ দখলদারিত্বের কোন সুযোগ নেই।

পাউবোর উত্তারঞ্চল প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবর রহমান বলেন, পাউবোর এ সকল জায়গা কাউকে লিজ দেওয়া হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। যারাই অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে তাদের তালিকা তৈরি করে অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে।