- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ৫-৬-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৩:১০
গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে অপরূপ সাজে সেজেছে হলুদ সোনালু
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ►
সুজলা-সুফলা শস্য - শ্যামলা বাংলাদেশ অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা-নীকেতন। এদেশের ছয়টি ঋতু প্রাকৃতিক নিয়মে বিচিত্র রূপ আর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হয়। এদের আবির্ভাবে বাংলাদেশ অপরূপ প্রাকৃতিক নীলা- বৈচিত্র্যে মেতে, নৈসর্গিক দৃশ্যের পট পরবর্তিত হয়।
এদেশের ঋতুবৈচিত্র্য যুগে যুগে কবিদের আবেগ ও সৌন্দর্য চেতনাকে আন্দোলিত করেছে। তাঁরা তাঁদের লেখনীর নিপুন আঁচড়ে এঁকেছেন রূপসী বাংলার সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যে ঋলমল এক প্রাণবন্ত ছবি। গ্রামবাংলার বুকে প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম আবির্ভূত হয় প্রখর সূর্যকিরণের দাবদাহ নিয়ে। গ্রীষ্মের প্রকৃত মূর্তি শুষ্ক, কঠোর ও রুক্ষ। কাঠফাটা রোদে চারদিক ঝাঁ ঝাঁ করে। মাঠ- ঘাট ফেটে চৌচির।
সূর্যের প্রখর তাপে সব যেন ঝলসে যায়। এ ঋতুতেই বাংলার রকমারি রসাল ফল ঝুলতে থাকে গাছের শাখায় শাখায়। আম, জাম, লিচু ও কাঁঠালের প্রাচুর্যে ভরে যায় গ্রামবাংলার আনাচ-কানাচ। সাধারণত প্রচন্ড গরম আর কাঠফাটা রোদের জন্য গ্রীম্ষ ঋতুর খ্যাতি থাকলেও দৃষ্টিনন্দন ফুলে ফুলে প্রকৃতি সাজতেও গ্রীম্ষ ঋতুর জুড়ি নেই। প্রকৃতিতে এখন গ্রীম্ষ। তবুও চারদিকে দৃষ্টিনন্দন ফুলের জন্য গ্রীম্ষেই যেন স্বর্গীয় রুপ দিয়েছে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে।
গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে অপরূপ সাজে সেজেছে হলুদ সোনালু বা বাঁদরলাঠি ফুল। সোনালী রংঙের বাহার থেকেই 'সোনালু' নামে নামকরণ। সোনালু আমাদের দেশের গ্রীষ্মের অতিপরিচিত দৃষ্টিনন্দন ৫ পাপঁড়ির থোকাযুক্ত হলুদ রঙের ফুল ও মাঝে পরাগ দন্ড অবস্থিত। সোনালু ফুলের আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চল ধরা হলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার অঞ্চলজুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃতি।
সোনালু ঝরনার বৃক্ষ। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। শীতে সমস্ত পাতা ঝড়ে গিয়ে গাছ থাকে পত্র শুন্য ও বসন্তের শেষে ফুল কলি ধরার পূর্বে গাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মে গাছের শাখা - প্রশাখা জুড়ে ঝুলন্ত মঞ্জুরিতে সোনালী হলুদ রংঙের ফুল ফোটে ও এর ব্যাপ্তি থাকে গ্রীষ্মকাল পুরো সময় জুড়ে।
গ্রীম্ষকালে যখন সবগাছে ফুল ফোটে তখন মনে হয় সোনালী আলোকচ্ছাটায় চারপাশ আলোকিত হয়েছে। বন-জঙ্গলে, বাড়ির আনাচে - কানাচে বা গ্রামীণ বাস্তার ধারে প্রাকৃতিকভাবে জম্মগ্রহন করে এবং অযন্ত ও অহহেলায় বেড়ে ওঠে। গাছের শাখা প্রশাখা কম ও কান্ড সোজাভাবে উপরের দিকে বাড়তে থাকে।
বাকল সবুজাভ থেকে ধূসর রঙের হয়ে থাকে এবং কাঠ মাঝারি শক্ত মানের হয়ে। গ্রামগঞ্জে এই কাঠ নৌকা তৈরির কাজে ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। সোনালুগাছ সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিটার পযর্ন্ত উঁচু হয়ে থাকে। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি সোনালু গাছ উৎপাদনের জন্য উপযোগী স্থান। ফুল থেকে ফল ও বীজ হয়।
এই বাঁদরলাঠির ভিতরে অনেক বীজ থাকে ও বীজ থেকে চারা জম্মায়। ফলের আকার দেখতে অনেকটা সজিনা আকৃতির মতো। সজিনার গায়ের চামড়াতে ঢেওতোলা আর সোনালু ফলে তা নেই চামড়া মসৃণ। ফল লম্বায় প্রায় ১ফুট। রং প্রথমে সবুজ ও পরিপক্ব হলে কালচে খয়েরি রং ধারণ করে। দেশের সবত্র রয়েছে সোনালু গাছ।
এ গাছের পাতার, ফল ও বাকলের রয়েছে ঔষধি গুণাগুণ। গবাদিপশুর চিকিৎসায় এর ফল ব্যবহার করা হয়। এটি ডাইরিয়া ও বহুমূত্র রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। সোনালু ফল ও ফুল সবই বানরের খুব প্রিয় খাবার। এজন্য কোন কোন অঞ্চলে সোনালুর ফলকে বাঁদরলাঠিও বলা হয়। কুড়িগ্রামের বিভিন্ন স্থানে গ্রীম্ষের দক্ষিণা হাওয়ায় সোনা ঝড়া সোনালু ফুল যেন প্রকৃতির কানে দুলছে দুল। প্রকৃতিকে অপরূপ সাজে সাজিয়ে তুলেছে সোনালু বা বাঁদরলাঠি ফুল।