• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৭-৮-২০২৪, সময়ঃ রাত ০৭:১৪

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের স্কুল ও খেলার মাঠ রক্ষায় মানববন্ধন



নিজস্ব প্রতিবেদক►

মাঠের চারদিকে দাঁড়িয়েছে সাঁওতাল শিশু–কিশোরের দল। তাদের হাতে ব্যানার, ফেস্টুন আর প্ল্যাকার্ড। সেখানে লেখা ‘আদিবাসী’ সাঁওতালদের স্কুল ও খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে নানা স্লোগান। তারা মাদক ব্যবসায়ী-ভূমিদস্যুদের বিচারের দাবি জানান।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ‘আদিবাসী‘ সাঁওতালপল্লী জয়পুর গ্রামের সাঁওতালদের একটি স্কুল ও খেলার মাঠ মাদক ব্যবসায়ী এবং ভূমিদস্যুদের কবল থেকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সাঁওতাল শিশু-কিশোর ও এলাকার মানুষ।

আজ (শনিবার, ১৭ আগস্ট) সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার পর্যন্ত জয়পুর গ্রামে মাঠের চারপাশে ‘আদিবাসী সাঁওতাল শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে তারা তাদের অধিকার ও দাবি সম্বলিত ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড নিয়ে নানা বয়সের শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এরআগে সকালে শতাধিক নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থীরা ওই খেলার মাঠে জড়ো হন। তারা প্রথমে মাঠের চারপাশ ঘুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে মাঠে মানববন্ধন করেন তারা। এ সময় অনেক শিশু-কিশোরকে কাঁদতে দেখা গেছে।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন- সাঁওতাল শিক্ষার্থী বিশপ মুরমু, সুমিত্রা মুরমু, শান্তনা হাসদা, সুচিত্রা মুরমু তৃষ্ণা, অভিভাবক ও সাঁওতাল নেতা ডা. ফিলিমন বাস্কে, সুফল হেমব্রম, রাফায়েল হাসদা, বার্নাবাস টাডু, আমিনুর রহমান, ময়নুল ইসলামপ্রমুখ।

মাদক ব্যবসায়ী-ভূমিদস্যুদের বিচারের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, সাঁওতাল শিশু-কিশোররা তাদের মাতৃভাষায় পড়াশুনার জন্য সাঁওতাল পরিবার ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সহযোগিতায় ‘শহিদ শ্যামল-রমেশ-মঙ্গল মার্ডি সাঁওতাল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করে। স্কুলের পাশেই সাঁওতাল শিশু-কিশোরদের জন্য একটি খেলার মাঠ আছে। মাঠটিতে সাঁওতাল শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করে আর স্কুলে তারা তাদের মাতৃভাষায় পড়াশুনার পাশাপাশি ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা করে আসছিল। সম্প্রতি ভূমিদস্যুরা স্কুল ও মাঠটি দখল করে নেয়। স্কুল ও মাঠ হারালে সাঁওতাল শিশু-কিশোররা খেলাধুলা এবং মাতৃভাষায় পড়াশুনা ও ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ হারাবে।

আদিবাসী সাঁওতাল শিশু কিশোরদের সংগঠক সুচিত্রা মুরমু তৃষ্ণা বলেন, সারাদেশে সাঁওতালসহ ‘আদিবাসী’ জনগোষ্ঠী মানবাধিকার এবং জীবনমানের সার্বিক দিক দিয়ে আজও নানাভাবে বঞ্চিত এবং সে কারণেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী থেকে তারা পিছিয়ে পড়া অবহেলিত জনগোষ্ঠী। সমতলের আদিবাসীরা আজ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। শুধু আদিবাসীই বিলুপ্ত হচ্ছে না, তাঁদের সংস্কৃতি, ভাষাও বিলুপ্ত হচ্ছে। এইসব ঘটনা সাঁওতালদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে আরও বিপন্ন করবে।

সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কে বলেন, মাদক ব্যবসায়ী এবং ভূমিদস্যু স্বপন শেখ ও আতাউর রহমান সাবুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ‘আদিবাসী’ সাঁওতাল শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ ও স্কুল দখল করে বাড়ীঘর নির্মাণসহ চাষাবাদ করছে। এছাড়াও সাঁওতালদের বাড়ীঘর, কৃষিকাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর ভাংচুর এবং মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি দখল করছে। এ নিয়ে সাঁওতালদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।