• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৪-৫-২০২৩, সময়ঃ রাত ০৭:১৫

গোবিন্দগঞ্জে শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী রাজা বিরাটের যাত্রী মেলা



গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি ►

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রাজা বিরাটের যাত্রীমেলা আজ থেকে শেষ হলো। প্রতিবছর বৈশাখ মাস জুড়ে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৈশাখ মাসের প্রথম রবিবার থেকে  শুরু হওয়া এই মেলা  চলে মাসব্যাপী।  আজ বৈশাখ মাসের শেষ রবিবার তাই আজকের এই মেলার মধ্য দিয়েই শেষ হচ্ছে এই মেলা। 

স্থানীয়রা জানান পুরো জৈষ্ঠ্যমাসেও এই মেলা হয়। কিন্ত তখন আর যাত্রী মেলা হয় না, শুধু কাঠের মেলা চলে। ছোট বড় ব্যবসায়িরা কাঠের তৈরী দরজা, খাট, জানালাসহ বিভিন্ন আসবাব পত্র বিক্রি হয়। এই মেলা থেকেই আসবাবপত্র কিনে বড় বড় মিষ্টির হাড়ি নিয়ে নতুন মেয়ে জামাইয়ের বাড়ীতে পৌছে দেয়ার রীতি আদিকাল থেকে চলমান রয়েছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাাখাহার ইউনিয়নের রাজস মৌজায় এই মেলার অবস্থান।প্রাচীনকাল থেকে শুরু হওয়া রাজাবিরাট মেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র তীর্থক্ষেত্র হিসেবে যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিবছরই দেশ- বিদেশের ধর্মপ্রাণ হিন্দুধর্মাবলম্বিরা এই মেলায় আসেন।  দুরদুরান্ত থেকে আসা তীর্থযাত্রীরা নতুন হাঁড়িতে ভাতের সাথে করলা ও আলু সিদ্ধ করে সবাই একসাথে শতবর্ষী বটতলায় বসে খেয়ে নতুন হাড়িটি সেখানে ভেঙ্গে ফেলেন।

মেলার দিন এধরণের শত শত হাড়ি-পাতিল ভাঙ্গা হলেও  এলাকায় প্রচারিত রয়েছে পরদিন সকালে এই হাঁড়ি-পাতিলের কোন অবশিষ্ট অংশ আর পাওয়া যায় না। হিন্দু  সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে প্রচলিত রয়েছে আলু-করলার সিদ্ধ ভাত খেলে যাদের বাবা-মা অথবা সে সকল আত্নীয় স্বজন প্রয়াত হয়েছেন তাদের আত্নার কল্যাণ হয়। 

তবে পৌরনিক কাহিনীর বরাত দিয়ে রাজা বিরাটের সেবায়েত দিলীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রায় সাড়ে  ৫হাজার বছর আগে পঞ্চ পান্ডব আজ্ঞাত বাসের সময়  বিরাট রাজার রাজ্যে অজন্ম বা দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এ কারণে অনাহারে অর্ধাহারে মানুষের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। সে সময় অনেক প্রজাসাধারণ অনাহারে মারা যায়।

এমতাবস্থায় প্রজারা রাজা বিরাটের কাছে  দেশ ত্যাগের অনুমোতি প্রার্থনা করলে  রাজা তখন রাজজ্যোতিষির শরনাপন্ন হন। তখন জ্যোতিষি  গণণা শেষে রাজাকে জানান দেশের প্রজাগণ যদি বিরাট রাজার মন্দিরের সামনে আতব চালের ভাতে আলু-করলা সিদ্ধ দিয়ে হবিশ্যি অন্ন খেলে আস্তে আস্তে এই অজম্ম বা দুর্ভিক্ষ কেটে যাবে।

রাজার কথা মত প্রজারা আলু-করলা সিদ্ধ দিয়ে আতব চালের ভাত রান্না করে খাওয়া শুরু করলে ক্রমেই রাজা বিরাট থেকে দুর্ভিক্ষ কেটে যায়। তারপর থেকে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের প্রতি রবিবার হিন্দুসম্প্রদায়ের মানুষ রাজা বিরাটের এই মন্দিরের সামনে হবিষ্যি অন্ন খেয়ে আসছেন। আদিকাল থেকে সেই বিশ^াসের প্রতি আস্থা রেখে রীতি মেনে আলু সিদ্ধ ভাত রান্না করে খেয়ে আসছে। 

অতি প্রচীনকাল থেকে এই মেলায় প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হলেও তীর্থযাত্রীদের জন্য নেই কোন বিশ্রামগার, শৌচাগার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী অঞ্জলি রাণী বলেন যাত্রীদের বিশ্রামাগার শৌচাগারসহ বিশুদ্ধ জলের পর্যাপ্ত  ব্যবস্থা থাকা দরকার। যার কিছুই নেই।