- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ৮-২-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১০:১৬
গোবিন্দগঞ্জে প্রাচীণ নির্দশনের চিহ্ন পোড়ামাটির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট
গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি ►
গোবিন্দগঞ্জে প্রাচীণ নির্দশনের চিহ্ন হিসেবে পোড়ামাটির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট। (সাধারণত ধর্মীয় উপাসনালয়ের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত) ভিত্তিপ্রস্তর পিলার পাওয়া গেছে, যা প্রাচীনত্বের স্যা বহন করে। গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে খননকাজ শুরু করেন রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক দল।
গোবিন্দগঞ্জের বিরাট রাজার প্রাসাদ হিসেবে পরিচিত ধ্বংসপ্রাপ্ত ঢিবিতে খনন শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে প্রাচীণ অবকাঠামো ও প্রত্নতাত্ত্বিক এসব নিদর্শন। যেগুলো প্রাচীন ও মধ্যযুগের হতে পারে বলে ধারণা করছেন খননকাজে নিয়োজিত রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক দল।
দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রাজা বিরাট। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখে গেছেন। এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজা বিরাটের এলাকায়। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, এক সময় রাজাহার ইউনিয়নের এই জায়গায় ছিল বিশাল প্রাচীরবেষ্টিত বিরাট রাজার প্রাসাদ।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে রাজাহার ইউনিয়নের বিরাট নগরীর প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। বর্তমানে রাজা বিরাট নামের এই স্থানে প্রতি বছর বৈশাখ মাসব্যাপী মেলা বসে। দেশ-বিদেশ থেকে এই তীর্থমেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ আসেন। রীতি অনুসারে আগত ভক্তবৃৃন্দ শতবর্র্ষী প্রাচীন বটবৃক্ষর নীচে হবিষ্যি অন্নভক্ষণ করেন। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি খননকারীদল এ কাজটি করছেন। ২০ জন শ্রমিক খননকাজে নিয়োজিত আছেন। এ ছাড়াও খননকাজে দলের আট সদস্য হলেন ড. নাহিদ সুলতানা, ড.আহমেদ আবদুল্লাহ, রাজিয়া সুলতানা, হাবিবুর রহমান, এস এম হাসানাত বিন ইসলাম, মো. আবুল কালাম আজাদ, তারিকুল ইসলাম ও উম্মে সালমা ইসা।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এবং খননকারী দলের প্রধান ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, এখানে ধারণার চেয়ে বড় আকারের অবকাঠামো পাওয়া গেছে। পুরো খননকাজ শেষ হলে এগুলো আসলে কোন সময়ের তা জানা যাবে। ধ্বংসাবশেষ এখন ঢিবিরূপে আছে। তবে নিদর্শনগুলো ঠিক কোন সময়ের এবং কারা এখানে বাস করতেন বা কাদের রাজ্য ছিল, বড় আকারে খননকাজ সম্পন্ন না হলে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, প্রত্নতত্ত্ব স্থলটি ইতিমধ্যে অনেক তিগ্রস্থ। তবে বড় পরিসরে খননকাজ করে জায়গাটিকে সংরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেইসঙ্গে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
জনশ্রুতি আছে, এখানে প্রাচীন একটি দূর্গনগরী ছিল। এর নিরাপত্তার জন্য ছিল সুউচ্চ প্রাচীর এবং প্রাচীরের বাইরে প্রশস্ত ও সুগভীর পরিখা। তবে খননকারী দল এখন পর্যন্ত প্রাচীন দূর্গনগরীর কোনো চিহ্ন খুঁজে পায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, মূল অবকাঠামোর সঙ্গে আরো দুই-তিনটি স্থাপনার সংযোগ সড়ক ছিল, যা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।