- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ৩০-৩-২০২৩, সময়ঃ সকাল ১০:০৬
গাইবান্ধায় ৯৮টি ডাকঘরের নেই নিজস্ব ভবন
ভবতোষ রায় মনা ►
গাইবান্ধার গ্রামঞ্চলের ডাকঘরগুলোর নিজস্ব ভবন না থাকায় কার্যক্রম চলছে খোলা মাঠ, চায়ের দোকান, স্কুলের বারান্দাসহ বিভিন্ন দোকান ও ভাড়া ঘরে। ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও স্ক্যানিং মেশিন সব থাকলেও ভবন অভাবে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলার সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, পলাশবাড়ী, সাদুল্লাপুর, গোবিন্দগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় ১২৬টি ডাকঘর রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান ডাকঘর ১টি, উপজেলা ডাকঘর ৬টি, সাব-ডাকঘর ৫টি এবং শাখা ডাকঘর রয়েছে ১১৪টি। এসব শাখা ডাকঘরের মধ্যে নিজস্ব ভবন রয়েছে মাত্র ১৬টির। এসব ডাকঘরে সরকারি সকল সুবিধাসহ ল্যাপটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার মেশিন, মডেমসহ বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হলেও ভবন অভাবে সেবা দিতে পাচ্ছেন না কর্মকর্তরা। এখানেই এসে এলাকার মানুষজন চিঠি পোস্টসহ আনুসাঙ্গিক কাজ সাড়েন। এসব শাখা ডাকঘরে কর্মরত রয়েছে তিনশতাধীক পোস্ট মাস্টার, পোস্ট ম্যান ও রানার। শুধু তাই নয়, এসব ডাকঘরে চিঠিপত্র পৌঁছানোর জন্য কোন যানবাহনও নেই। প্রধান ডাকঘর থেকে ২১ জন রানারের মাধ্যমে ওইসব শাখা ডাকঘরে চিঠি পৌঁছানো হচ্ছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ল্যাংগাবাজার শাখা ডাকঘরের কার্যক্রম চলছে কসমেটিকস-স্টেশনারীর দোকানে। বালাআটা শাখা ডাকঘরের কার্যক্রম চলে একটি বাড়ীর আঙ্গিনায়। নিজের হোমিও ওষুধের দোকানে ডাক টিকিট বিক্রি করেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার দারিয়াপুর শাখা ডাকঘরের পোষ্ট মাস্টার মকবুল হোসেন। সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়ন ডাকঘরও চলছে অন্যর ছোট চালা ঘড়ের নিচে।
ল্যাংগাবাজার শাখার পোস্টমাস্টার নুরুজ্জামান মিয়া জানান, ডাকঘরের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে বাসাবাড়িতে ও দোকানে। নিজস্ব ভবন না থাকায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সেইসাথে এসব ইলেকট্রনিক্স উপকরণ চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ দরকার।
বালাআটা শাখার পোস্ট মাস্টার আব্দুল করিম বলেন, ঘর না থাকার কারণে বালাআটা বাজারের শাখা পোস্ট অফিসটির কার্যক্রম নিজ বাড়ির বারান্দায় চালাচ্ছি। সমস্যা হলেও করার কিছু নেই। প্রিন্টার, এসক্যান মেশিন ও ল্যাবটপ চালাতে সমস্যা হয়।
পলাশবাড়ি উপজেলার হালিমনগর ডাকঘরের নিজস্ব ঘড় বা ভবন না থাকায় বাজারের ফাঁকা জায়গায় মাটিতে ছালা পেতে চলছে দাফতরিক কার্যক্রম। ঝড় বা প্রাকৃতিক দূর্যোগে বন্ধ থাকে সকল কাজ। এভাবেই দীর্ঘদিন থেকে চলছে ডাকঘরটির কার্যক্রম। একই চিত্র উপজেলার মনোহরপুর ডাকঘরের, কার্যক্রম চলছে চায়ের দোকানের বাড়ান্দায়। চায়ের দোকান বন্ধ থাকলে বাড়িতে বসে কাজ করেন পোস্টমাস্টার।
পলাশবাড়ি উপজেলার হালিমনগর ডাকঘরের পোস্টমাস্টার আব্দুল হালিম বলেন, সব মেশিন টেশিন দিচে এগলা রাখার কোন জায়গা নাই। খুব সমস্যা হয়্যা যায় কোন চুরি হয়। হাতে হাতে আনা লাগে আবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ান লাগে। উপজেলার হালিমনগর গ্রামের সোহেল মিয়া বলেন, বাড়ির পাশে ডাকঘরের শাখা থাকলেও, সেটি অনিয়মিত পরিচালিত হওয়ায় বে-সরকারি কুরিয়ার সার্ভিসমুখী হচ্ছেন স্থানীয়রা। চাকুরিসহ অন্যান্য আবেদন ও চিঠি পাঠাতে আসা যাওয়া করতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত খরচ।
সাদুল্যাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের বকসিগঞ্জ বাজার শাখা ডাকঘরের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে মুদি দোকানে। নানা বেহাল দশার মধ্যে রয়েছে উপজেলার আরও পাঁচটি শাখা ডাকঘর। উপজেলার নয়টি শাখা ডাকঘরের মধ্যে পাঁচটি শাখা ডাকঘরের নিজস্ব কোনো ঘর নেই। অনুরোধে অন্য কারও জায়গায় কিংবা দোকানে বসে পরিচালনা করা হচ্ছে পাঁচটি শাখা ডাকঘর। উপজেলার ঘেগারবাজার শাখা ডাকঘরের রানার নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলেন, অন্যের চাকরির চিঠি বিলিবন্টন করলেও নিজের চাকরি জাতীয়করণের চিঠি কবে পাব, সেটা জানি না। চাকরি জাতীয়করণের আশা ছেড়ে দিয়ে এখন নামমাত্র ভাতায় মানুষকে ডাকসেবা দিয়ে যাচ্ছি।
সাদুল্যাপুর উপজেলা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার নূরুল হুদা জানান, ডাকঘরের পলেস্তারা খসে পড়ছে। সময়মতো মেরামত না করায় মূল ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এই ডাকঘরের আওতায় নয়টি শাখা ডাকঘর আছে। মাত্র চারটি শাখা ডাকঘরের নিজস্ব ঘর আছে। বাকি পাঁচটি শাখা ডাকঘরের নিজস্ব কোনো ঘর বা জায়গা নেই। ডাকঘর পাঁচটি হচ্ছে-বকশীগঞ্জ বাজার, কিশামতখেজু বাজার, ঘেগারবাজার, জামালপুর বাজার ও ভাতগ্রাম বাজার ডাকঘর। এসব স্থানে অনুরোধে অন্যের দোকানঘর বা বারান্দায় ডাকঘরের কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পোস্ট অফিস ১টি এবং ২২টি সাব-পোস্ট অফিসের মধ্যে ৪টি শাখা পোস্ট অফিসের ভবন রয়েছে। এদিকে ফুলছড়ি উপজেলা পোস্ট অফিস ছাড়া অবশিষ্ট ৬টি সাব-পোস্ট অফিসের কোন ভবন নেই। ভাড়া ঘরে চলে কার্যক্রম।
বাংলাদেশ বিভাগীয় ডাক কর্মচারি সংগ্রাম পরিষদ গাইবান্ধা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুকুমার চন্দ্র মোদক বলেন, যেখান থেকে রাজস্ব আয় হয়, সেখানে কোন কার্যালয় নেই। এছাড়া ডাক ব্যবস্থার উন্নয়নসহ শাখা পোস্টমাস্টার ও গ্রামীণ ডাক রানারদের চাকরি জাতীয়করণ, ডাক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও রেশন ব্যবস্থা চালু করাসহ শাখা ডাকঘরের নিজস্ব ভবন করার দাবি জানান এই নেতা।
ডাক কর্মচারী পরিষদের গাইবান্ধা জেলা শাখার উপদেষ্টা গোলাম রব্বানী বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যখন একটি চিঠি পাঠাতে হয় তখন কিন্তু এই শাখা ডাকঘর গুলোরই প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরিপ্রার্থীদের চিঠি, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে শাখা ডাকঘর গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নিজস্ব ভবন ও ডাক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে ডাক বিভাগের উন্নয়নে দ্রুত পদপে নেওয়া জরুরি।
গাইবান্ধা পোষ্ট অফিস পরিদর্শক মোঃ সানোয়ার হোসেন জানান, জেলার ৯৮টি ডাকঘরের কোন ভবন নেই। শাখা ডাকঘরের জন্য সরকারিভাবে নিজস্ব জমি কেনার নিয়ম নেই। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে এলাকার কেউ জমি দান করলে সেখানে পাকা ঘর করার জন্য সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে। তাই শাখা ডাকঘরগুলোর নিজস্ব ভবনের জন্য স্থানীয় এলাকাবাসীকেই এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে জায়গা ও ভবন অভাবে জনগন সেবা বঞ্চিত হবে এটি দুঃখজনক জানিয়ে দ্রুত এসব এলাকায় ভবন করার আশ্বাস দিয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মোঃ অলিউর রহমান বলেন, সরকার এ ব্যাপারে যতষ্ট সচেতন রয়েছে। আমরা সরকারে পক্ষ থেকে তাদেরকে যে কোন ধরণের যাতে উন্নত অবকাঠামোর মধ্যেই এ ধরণের সার্ভিসগুলো দিতে পারে সেই লক্ষে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।