- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ৩-২-২০২৩, সময়ঃ সন্ধ্যা ০৬:৩৫
গাইবান্ধায় জমেছে ধানের চারা হাট
নিজস্ব প্রতিবেদক ►
গাইবান্ধার মাঠজুড়ে শুরু হয়েছে বোরো চারা রোপনের কাজ। এ লক্ষ্যে জমে ওঠেছে ধানের চারা কেনা-বেচার হাট। অনেক কৃষক হাটে গিয়ে বিক্রি করছেন চারা। আবার কেউ কেউ চারা সংকটে ছুটছে এই হাটে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে একটি দালাল চক্র। তারা ক্রেতা-বিক্রেতাকে ফাঁদে ফেলে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকা। এদের খপ্পড়ে পড়ে ঠকছেন হাটে আসা কৃষকরা।
সরেজমিনে গাইবান্ধার দাড়িয়াপুর, ভরতখালী, মাঠের হাট, সাদুল্লাপুর হাট, মীরপুর ও নলডাঙ্গা হাটে গিয়ে দেখা গেছে, বোরো ধানচারা ক্রয়-বিক্রয়ের চিত্র। এসময় বেশ কিছু দালাল কৃষকদের কৃষকদের কেনা-বেচা করে দেওয়ার নামে পকেটস্থ করছে টাকা। এসব দালালের উৎপাতে চরম বিপাকে পড়ছে চারা ক্রয়-বিক্রেতারা। তাদের অভিযোগ হাটে আসা মাত্র ধমক দিয়ে ধানের চারা কেনা-বেচার দায়িত্ব নেওয়ার নামে টাকা গ্রহণ করেছে একদল দালাল।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, গত মাসে তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় গাইবান্ধা জেলার বেশ কিছু বোরো বীজ তলা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে চারা সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। হাটে ধানের চারা পাওয়া গেলেও তা কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন বার্গাচাষিরা। তাদের নিজস্ব জমি না থাকায় অন্যের জমি বর্গা (আদি) নিয়েছেন। এর আগে বীজতলা করতে না পাড়ায় তাদের একমাত্র ভরসা হাটের চারা। ফলে অধিক দামে চারা কিনে চরম হিমশিম খাচ্ছেন তারা। শুধু চারায় নয়, সম্প্রতি বিদ্যুৎ, ডিজেল, সার-কিটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় বোরো আবাদে বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে। যার কারণে অনেকটা দুশ্চিন্তায় কৃষক।
দেখা গেছে, কৃষকরা রিকশাভ্যান ও বাইসাকেল যোগে বস্তাভর্তি করে ধানের চারা এনে ওইসব হাটে বিক্রি করেছেন। আর ক্রেতারা মান যাচাই ও জাত নির্ণয়ে চাহিদা মতো চারা কিনছেন। রীতিমত সেখান থেকে চাষিরা চারা কিনে নিয়ে জমিতে রোপণ করছেন। চারা বিক্রেতা মোখলেছুর রহমান বলেন, আমার জমির বীজতলা চারা উৎপাদন হয়। জমিতে চারা লাগানো হয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত ১০ পোন চারা হাটে বিক্রি করলাম। এই চারা বিক্রির জন্য দালালকে টাকা দিতে হয়েছে। এছাড়া প্রতিপোন চারা বিক্রি বাবদ ২০ টাকা হারে হাট ইজারাদারকে খাজনা দিতে হয়েছে।
চারা কিনতে আসা নেহাজ উদ্দিন জানান, এ বছরে এক একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন। এরই মধ্যে শীতের কারণে তার বীজতলার ৫০ ভাগ চারা নষ্ট হয়েছে। এর ফলে চারা সংকটের কারণে হাইব্রিড জাতের ১ পোন চারা (২০ গোন্ডা) ৪৫০ টাকা ও দেশিয় চিকন জাতের চারা ৩০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। এভাবে ৪ পোন চারা ক্রয় করেছেন এই কৃষক। এক্ষেত্রে ইজারাদার ও দালালকে টাকা দিতে হয়েছে।
বর্গাচষি জলিল উদ্দিন বলেন, আমার নিজের জমি না থাকায় প্রতিবেশী এক ব্যক্তির দেড় বিঘা জমি আদি নিয়েছি। সেই জমিতে রোপন করতে ৯০০ টাকা দিয়ে চারা কিনলাম। এভাবে চড়া দামে চারা-ডিজেল-সার-কিটনাশক কিনে আবাদ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। এছাড়া চারা কেনার সময় দালালের খপ্পড়ে পড়ে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয়েছে।
সাদুল্লাপুর হাট ইজারাদারের প্রতিনিধি তাজুল ইসলাম তাজু বলেন, সম্প্রতি হাটে প্রচুর পরিমান চারা কেনা-বেচা হচ্ছে। পোন প্রতি খাজনা ২০ টাকা করে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতের উপপরিচালক বেলাল উদ্দিন জানান, চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৭৫ ভাগ। বোরো আবাদে কৃষকদের লাভবান করতে ইতোমধ্যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে কৃষকরা বোরো ধান ঘরে তুলে অনেকটাই লাভবান হবেন।