• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৮-৩-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১০:২১

গাইবান্ধায় অসচেতনতায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে পানিতে ডুবে মৃত্যু



ভবতোষ রায় মনা

সোস্যাল মিডিয়ায় গত বুধবার ব্রহ্মপুত্র নদে গোসল করতে নেমে শিক্ষার্থী মাহিম (১৬) ও রোমিও (১৬) নামের দুই বন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা সবাইকে কাঁদিয়েছে। সেই সাথে সকল অভিভাবকের মনে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাস্থল গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদী পাড়ে ভীড় জমিয়েছে হাজারো নারী-পুরুষ। শুধু তাদের দেখার জন্য। অনেকের চোখে জল ঝড়তে দেখা গেছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে, পাশাপাশি সন্তানদের সাঁতার শেখাতে হবে।

জেলা শহরের আহম্মেদ উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিম (১৬) ও রোমিও (১৬)। তাদের বাড়ি শহরের ডেভিড কোম্পানি পাড়ায়। আনোয়ার হোসেনের ছেলে মাহিম (১৬) এবং লিটনের একমাত্র ছেলে রোমিও (১৬)। পুত্রকে হারিয়ে এই পরিবার দুটির কি অবস্থা যাচ্ছে, তা বলার দরকার নেই।

বুধবার আসলে কিভাবে ঘটলো ঘটনাটি, যতদূর জানতে পেরেছি, বালাসীঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে মাহিম ও রোমিওসহ ৬-৭ জন বন্ধু গোসল করতে নামে। এসময় হঠাৎ করে তারা নদীর মাঝখানে গেলে পানিতে ডুবে যায়। অন্যরা সাঁতার কেটে নদীর তীরে আসলেও নিখোঁজ হয় মাহিম ও রোমিও। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা তাদের উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। দুপুর ১২টা ও ২টার দিকে বালাসীঘাট থেকে ফায়ার সার্ভিস ও ডুবুরি দল তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।

বিভিন্ন সময় পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর খবর। শুধু যে শিশুরাই প্রাণ হারাচ্ছে এমনটা নয়, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষই এভাবে অকালে প্রাণ হারান। গবেষণা বলছে, প্রতিবছর পানিতে ডুবে শুধুমাত্র ৫ বছর বয়সি অন্তত ১১ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। সব বয়সি মিলে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।

এখন কথা হচ্ছে প্রতিবছর ২৫ জুলাই বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস। প্রতি বছরই ক্যালেন্ডার ধরে দিনটি আসে, চলেও যায়। দুনিয়াজুড়ে ফি বছরে একবার পানিতে ডোবা মৃত্যু প্রতিরোধ করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নানা আলোচনা হয়। তারপর যেমন চলার, সব চলে তেমনই। সরকারি হিসাবেই দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সি শিশু মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হচ্ছে পানিতে ডুবা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা স্থানীয় থানায় খুব একটা জানানো হয় না। ফলে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানা যায়নি। শিশুরা নিজ ঘর, ঘরের আঙিনায়, গোসলখানায় পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। বালতি-গামলার পানিতে পরেও শিশুর মৃত্যু হচ্ছে।

গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: খলিলুর রহমান বলেন, এমন করুণ মৃত্যু রোধে সবচেয়ে জরুরি জনসচেতনতা। পানিতে ডুবে মৃত্যু, অসচেতনতাই কাল। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিকদের কাস শেষে এ নিয়ে আলোচনা করা উচিত। শিশুদের সাঁতার শেখা বাধ্যতামূলক করা উচিত। বাধ্যতামূলক এ শিক্ষায় নিশ্চয় সবার মঙ্গল হবে।

খলিলুর রহমান আরও বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে মায়েরা কোমরে বেল্ট লাগিয়ে সেই বেল্টে শিশুকে বেঁধে রাখতে পারেন। বালতি বা গামলায় কখনও পানি ভরে রাখা যাবে না। আশপাশের ডোবার পাড়ে বেষ্টনী দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার কাজটি করে দিতে পারে। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারে।