- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ২৯-১-২০২৩, সময়ঃ দুপুর ০১:২৬
কৃষি জমির মাটি কেটে ভাটায় নেয়ায় ধ্বসে গেছে পাশের জমি, ব্যাপক ক্ষতি
শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ►
প্রায় ৭ ফুট গভীর করে কাটা হয়েছে তিন ফসলি কৃষি জমির মাটি। নেয়া হয়েছে পাশের মেসার্স জিকরুল হক (এম জেড এইচ) ইট ভাটায়। অতিরিক্ত গর্ত করায় ধ্বসে গেছে পাশের একটি জমি। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরাইল নামে এক কৃষক। বোরো ধান আবাদ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তিনি।
অন্য জমিগুলোও ঝু্ঁকিপূর্ণ অবস্থায়। যে কোন সময় সেগুলোও ধ্বসে পড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় দায় স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দেয়া দূরের কথা উল্টো উদ্ধত আচরণ করছেন। এরপরও প্রশাসন নির্বিকার থাকায় জমির মালিকরা অসহায়ত্বে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কিসামত কামারপুকুর কাঙ্গালুপাড়ার মৃত আজিজার রহমানের ছেলে আব্দুল গণি ইসরাইল বলেন, আমি একজন বর্গাচাষী। অন্যের জমি আদি নিয়ে চাষাবাদ করি। বাড়ির পাশেই কাঙ্গালুপাড়ার বালাডাঙ্গা দোলায় (চরা) ৩৫ শতক জমি বন্ধক নিয়েছি বোরো ধান আবাদের জন্য।
গত শুক্রবার রাতে জমিতে পানি দেই। সকালে বেচন (ধান চারা) নিয়ে এসে দেখি প্রায় ৩ শতক জমি ধ্বসে গিয়ে সব পানি বের হয়ে গেছে। পাশের জমিটা কয়েকদিন আগে পাশের এম জেড এইচ ইটভাটার মালিক হারুন অর রশিদ প্রায় ৭ ফুট গভীর করে কেটে মাটি নেয়ায় এই দূর্ঘটনা ঘটলো। এখন আমি এই জমি ভরাট করবো কোন মাটি দিয়ে? আর চাষ করবো কিভাবে? আমার ক্ষতি পূরণ করবো কেমনে?
তিনি আরও বলেন, এভাবে মাটি কাটার সময়ই আমরা বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা শোনেনি। সম্পূর্ণ গায়ের জোরে অস্বাভাবিক মাত্রায় অতিরিক্ত গর্ত করায় আশেপাশের সব জমিই ঝুঁকিতে পড়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছি। ধ্বসে যাওয়ার পর ভাটা মালিককে জানালেও তিনি কোন গুরুত্ব দেননি। বরং উল্টো সাংবাদিক ও প্রশাসনকে কেন জানিয়েছি তা নিয়ে নানা হুমকি দিচ্ছেন।
এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে পাশের জমির সবজি চাষী তরুণ উদ্যোক্তা হাসান মাহমুদ বলেন, ভাটা মালিক প্রভাবশালী ও শিল্পপতি হওয়ায় কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেনা। মাটি কাটার সময় জানালেও অবৈধভাবে কৃষির ক্ষতি করলেও প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়ায় ভাটার ম্যানেজার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এতটা গভীর করে কেটে নিয়েছে। এখন খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদেরকে।
আমরা চরম আতঙ্কে আছি। যে কোন সময আশেপাশের জমিও ইসরাইল চাচার জমির মত ধ্বসে ওই গর্তে বিলিন হতে পারে। এখনই এই অবস্থা। বর্ষায় যে কি হবে? সে চিন্তাতেই দিশেহারা। কারণ প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করে ৩৫ শতক জমিতে বিভিন্ন সবজি চারা লাগিয়েছি। এমতাবস্থায় জমি ভেঙ্গে গেলে মারাত্মক ক্ষতি হবে। তাই এব্যাপারে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। নয়তো এখানকার সব জমি ওয়ালাই চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
মেসার্স এম জেড এইচ ইটভাটায় গেলে ভাটা মালিক হারুন অর রশিদ বলেন, সারা দুনিয়ায় মাটি। এই মাটি নিয়েই ভাটা চলে। এটা সবাই জানে। মাটির প্রয়োজন ছিল তাই মাটি কেটেছি। এতে কার কি ক্ষতি হয়েছে তা আমার দেখার বিষয় নয়। তাছাড়া যার ক্ষতি হয়েছে তার সাথে আমি বুঝে নিবো। আপনারা (সাংবাদিক) কেন? কৃষক অভিযোগ করায় এসেছি বললে তিনি উদ্ধতপূর্ণ আচরণ করে বলেন, কোন দূর্বল মানুষ ইটভাটা করেনা। তাই আপনাদের কত সংবাদ করার আছে করেন। তাতে ভাটা বন্ধও হবেনা বা আমাকে কেউ ধরেও নিয়ে যাবেনা।
এব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বলেন, মাটি কাটার সময় খবর পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্পটে কাউকে না পাওয়ায় এবং পাশের জমি মালিকরা অভিযোগ না করায় কোন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। আর কৃষি জমি ধ্বসে যাওয়ার বিষয়টা জানিনা। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বেও এই ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার প্রায় ৫০ হেক্টর জমি ধান পুড়ে গিয়েছিল। সেসময়ই ভাটা কর্তৃপক্ষ কৃষকদের কথায় কর্ণপাত করেনি। পরে দীর্ঘ আন্দোলনের পর প্রশাসনের সহযোগীতায় ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। এছাড়াও নিয়ম না মানার কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের অভিযানে বার বার জরিমানাও করা হয়। কিন্তু তারপরও থেমে নেই তার অবৈধ মাটি কাটা। ফলে ব্যাপকভাবে নষ্ট হচ্ছে ওই এলাকার তিন ফসলি কৃষি জমি। একারণে সচেতন মহলের দাবী এই ভাটার বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হোক।