- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ২০-৬-২০২৩, সময়ঃ দুপুর ০২:১৭
কুড়িগ্রামে লাম্পি স্কিন রোগে হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে গরু
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ►
আসন্ন কোরবানি ঈদের আগে কুড়িগ্রামে গবাদি পশুতে দেখা দিয়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। গেল এক সপ্তাহে এক ইউনিয়নেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৫ টি গরু। বাকী ৯টি উপজেলা ৭৩ ইউনিয়নে এই রোগে আক্রান্ত শত- শত গরু। রোগের সংক্রমণে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক পর্যায়ের খামারী ও গৃহস্থরা। সাধারণ মশা মাছি থেকে এই রোগের সংক্রমণ হয় বলে মনে করেন প্রাণী সম্পদের চিকিৎসকগণ। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনয়নে মারা গিয়েছে ১০টি গরু । তবে শুধু কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নই নয় এই রোগে আক্রান্ত উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের অসংখ্য গরু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ি, ঘোগাদাহ, যাত্রাপুর, বেলগাছ ও হলোখানা ইউনিয়নেও দেখা দিয়েছে লাম্পি স্কিন। এছাড়াও জেলার ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, রাজারহাট, উলিপুর ও রৌমারীতে উপজেলায় মিলেছে এই রোগের পাদুর্ভাব। প্রতিদিন আক্রান্ত পশুর সংখ্যা বাড়ছে। কোনও সুনির্দিষ্ট প্রতিষেধক না থাকায় সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণী চিকিৎসকরা। প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও আক্রান্ত পশুর মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। আক্রান্ত পশু অনেক সময় ভুল চিকিৎসার কারণে মারা গিয়ে থাকতে পারে।
এদিকে কয়েকদিনে কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নেই আক্রান্তের সংখ্যা ১০টি গরু এবং ১ সপ্তাহে মৃত্যুের সংখ্যা ৫ টি। গত ১৪ জুন লাম্পি স্কিনে মারা গিয়েছে এই ইউনিয়নের তালুক কালোয়া পুর্বপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক এরশাদুল (৪০) হকের গরু এবং ১৭ জুন মারা গেছে সর্দার পাড়ার ইয়াকুব মাষ্টারের (৪৩) গরু।
এরশাদুলের স্ত্রী মোর্শেদা বলেন, গত পনের দিন আগের আমার গরুর লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দেয় আমি গ্রাম্য ডাক্তার মেহেরুলের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমার গরুকে ১৯টি ইনজেকশন দিয়েছিল। আমার সব মিলি ৫০০০ টাকা খরচ হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার গরুটি মারা গেছে। তালুক কালোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইয়াকুব মাষ্টারের গরু গত ৮ দিন ধরে লাম্পি স্কিন ডিজিজ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। পল্লী চিকিৎসাকের নিকট পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে ৮ দিন পরে অসুস্থ বেশি হয়ে গতকাল মারা যায়।
তালুক কালোয়া পূর্বপাড়ার কৃষক নুরনবীর গরু প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসকের ৯ দিন ধরে ব্যবস্থাপত্র নেওয়ার পরের এখন মৃত্যুর ক্ষণ গুনছে। নুরনবীর স্ত্রী সালেহা বেগম বলেন,১২ দিন আগে আমার গরু অসুস্থ হলে পল্লী চিকিৎসক জিয়া তিন দিনে ৬টি ইনজেকশন দিয়েছিল কিন্তু অসুস্থ বেশি হলে কুড়িগ্রাম পশু হসপিটালে গরুকে নিয়ে যাই। তাদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ৯দিন চিকিৎসা করলাম কিন্তু কয়দিন ধরে কোন খাবার খাচ্ছে না,যেকোনো সময় মারা যাবে।
গত ৩ দিন আগে এই ইউনিয়নে মারা যায় দাশের হাট মডেল হাই স্কুলের সামনে বাবলু মিয়ার গরু, বক্কর মিয়ার গরু মারা যায় ৫ দিন আগে। এছাড়াও নুর হোসেনের গরু মারা যায় ১ সপ্তাহ আগে। ভুল চিকিৎসায় এসব গরু মারা যেতে পারে বলে মনে করেন নছিতউল্লহ (৬৫)। তিনি বলেন আমার প্রতিবেশী এরশাদুল হকের গরু ১৫ দিন আগে মেহেরুল ইসলামের চিকিৎসা নেওয়ার পর মারা গেল।
এছাড়াও আর এক প্রতিবেশী নুরনবীর গরু পশু ডাক্তার জিয়া ৩ দিনে ৬টি ইনজেকশন দেওয়ার পরে অসুস্থ বেশি হলে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসকের চিকিৎসা নেওয়ার পরও গরুটি নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়েছে। যেকোনো সময় গরুটি মারা যাবে।
প্রাণী চিকিৎসক পরিচয়দানকারী জিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে সাংবাদিকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।পরবর্তীতে ফোনকলে বলেন , কৃষক নুরনবীর গরু অসুস্থ হলে প্রথমে আমাকে খবর দেয়। আমি শুরুর দিকে কয়েকদিন প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও গরুর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তারা আমার উপরে অনিহা প্রকাশ করে।
তখন আমি তাদের অন্য চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দিয়েছি। তারা আমার পরে আরো দুইজন চিকিৎসক দেখিয়েছেন। এখন তাদের গরুর কি অবস্থা আমি জানি না। কোথা থেকে পশু চিকিৎসা শিখেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি বগুড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রাণি চিকিৎসায় ৬ মাসের কোর্স করেছি।
ব্র্যাক থেকে ১ মাসের কৃত্রিম প্রজনন (artificial insemination) এর উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে লাম্পি স্কিন ডিজিজ এর চিকিৎসা করাচ্ছেন মেহেরুল ইসলাম। মাত্র ১ মাসের কৃত্রিম প্রজননের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে লাম্পি স্কিন ডিজিজ এর চিকিৎসা করাতে পারেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ছোট গরুর চিকিৎসা করাই বড়ো গরুর চিকিৎসা করাই না।
কুড়িগ্রাম জেলার প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসক মোশাররফ হোসেন বলেন, লাম্পি স্কিন এর এখন পর্যন্ত কোন প্রতিশোধ তৈরি হয়নি। সাধারণত লাম্পি স্কিন ডিজিজ হলে নরমাল প্যারাসিটামল ও স্যালাইন খাওয়ালেই সাতদিনের মধ্যেই এই রোগ ভালো হয়। আমরা কুড়িগ্রাম ও ভূরুঙ্গামারীর এই রোগের সেম্পল নিয়ে ঢাকায় পাঠিয়েছি। পল্লী চিকিৎসক জিয়া ও মেহেরুল এই রোগের চিকিৎসা করাতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওনাদের চিকিৎসা করার কোন রাইড নেই।