• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৩০-৯-২০২২, সময়ঃ রাত ১০:১২

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ৩৫ লক্ষ টাকা দামের জেনারেটর ও মূল্যবান নথিপত্র চুরির অভিযোগ উঠেছে



কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি  ►

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে ৩৫ লক্ষ টাকার  উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ জেনারেটরসহ সরকারি মুল্যবান নথিপত্র চুরি ও আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। লিখিত দেয়ার পরেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তৎপর কিছু অসাধু কর্মকর্তা। এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার সৃষ্টি করেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কুড়িগ্রামে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদের মেয়াদকালে অফিসের ক্যাশিয়ার আব্দুল আজিজ ও গাড়ি চালক জহুরুল হকের যোগসাজশে অফিসের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর চুরি ও অফিসের মূল্যবান নথিপত্র গায়েব করা হয়। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ার আব্দুল আজিজ গাড়ি চালক জহুরুল হক, স্টোর কিপার মমিনুল ইসলাম, সিকিউরিটি গার্ড ও আউটসোর্সিং এর কর্মচারী তৎকালীন আব্দুর রশিদ উপ-পরিচালকের মেয়াদ শেষের দিকে জেনারেটর চুরি করে আত্মসাত করেন এবং জেনারেটর সংশ্লিষ্ট সমস্ত কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন।

পরিচালক আব্দুর রশিদ অবসর গ্রহণ করলে বিষয়টি একেবারে ধামাচাপা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে জনমনে গুঞ্জন শুরু হলে কয়েকজন কৃষক পরবর্তি উপ-পরিচালক শামসুদ্দিন এর  সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং জেনারেটর চুরি ও আত্মসাতের ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

কিন্তু ঝামেলা এড়াতে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে পরেন পরবর্তী উপ-পরিচালক শামসছুদ্দিন মিয়া এবং অতিরিক্ত উপ পরিচালক (পিপি) খাজানুর রহমান। বিষয়টি যাতে অফিসের বাইরে যেতে না পারে সে জন্য অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদ উপ-পরিচালক শামছুদ্দিন, অতিরিক্ত উপ পরিচালক (পিপি) খাজানুর রহমান ও সদর উপজেলার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন।

সেখানে তিনি বলেন জেনারেটর চুরি ও আত্মসাতের বিষয়টি কোনভাবেই যেন অফিসের বাইরে না যায়। কিন্তু বিষয়টি শহরের টক অব দ্য টাউন এ পরিণত হওয়ায় রেগে যান উপ-পরিচালক শামছুদ্দিন। তিনি কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য অভিযোগ এনে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এবং কয়েকজন কর্মচারীকে বদলি করার পাঁয়তারা চালান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক কর্মকর্তা বলেন, ২০২২ সালের জুন মাসের ৩-৪ তারিখের দিকে অফিসের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে জেনারেটরটি ও দাপ্তরিক কাগজপত্র অফিস থেকে সরিয়ে ফেলা হয় এবং জেনারেটর রুমের সকল আলামত ধ্বংস করেন গাড়ি চালক জহরুল ইসলাম।

এ প্রসঙ্গে কথা হলে অভিযোগকারী কৃষক রেজাউল করিম বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি খামারবাড়ি থেকে পুরনো জেনারেটরটি চুরি হয়েছে আমরা বিষয়টি পরিষ্কার হতে উপ-পরিচালক শামছুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলি তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন এবং তিনি আশ্বস্ত করেন জড়িতদের দ্রুত বিচার করা হবে।

কিন্তু অনেক দিন অতিবাহিত হলেও জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্ত না হলে আমরা শঙ্কিত এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বিচারের আওতায় না আসলে আমরা মনে করি আগামীতে খামারবাড়িতে অনেক বড় বড় চুরির ঘটনা ঘটবে। সরকারি সম্পত্তি এভাবে আত্মসাৎ করার অধিকার কারও নেই এবং আমরা আগামীতে মানববন্ধন করার চেষ্টা করছি।

অভিযোগকারী কৃষক আপেল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা চায়ের দোকানে বিভিন্নভাবে জানতে পারি অফিসে ৩৫ লক্ষ টাকা জেনারেটর মূল্যবান কিছু নথিপত্র  চুরি হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে ১০-১২ জন কৃষক উপ-পরিচালক শামসছুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করি। তিনি বিষয়টি সত্য স্বীকার করে বলেন, জেনারেটর চুরি ও আত্মসাতের ঘটনাটি সত্য। আমরা তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন আব্দুল মোতালেব বলেন, জেনারেটরটি ১৯৮৯ সালে ক্রয়কৃত  ৩৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা যার বাজার মূল্য।

অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে উপ পরিচালক শামছুদ্দিন সাথে গোপনে কথা হলে তিনি জানান, জেনারেটরটি ৩২ বছর পুরনো এবং আপদকালীন সময়ে বিদ্যুৎতের চাহিদা ও সেচের কাজে ব্যবহার হতো। জেনারেটরটি ছিল উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন। পরবর্তীতে তেল খরচ ও মেইনটেনেন্স খরচ বেশি হওয়ায় জেনারটরটি দীর্ঘদিন থেকে পরিত্যক্ত ছিল। উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলামের আমলে অফিসের গাড়ি চালক জহুরুল ইসলাম মৌখিকভাবে নজরুল ইসলামকে জেনারেটর রুমে থাকার জন্য অনুমতি দেন।

মঞ্জুরুল ইসলাম আনঅফিসিয়ালি গাড়ি চালককে জেনারটর রুমে থাকার অনুমতি প্রদান করেন। পরবর্তীতে তিনি জেনারেটরটি সম্পর্কে খোঁজ খবর না রাখলে সেই সুযোগে চলতি বছরের জুন মাসে সরিয়ে ফেলা হয়। এক কল রেকর্ড বার্তায় আরও বলেন, আমি বিষয়টি পুরোপুরি বুঝতে পেরেছি, তবে ব্যবস্থা নিতে পারছি না যে, তাতে অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক আব্দুর রশিদের পেনশন ভাতা আটকে যেতে পারে।

এদিকে অফিসের জেনারেটর চুরির বিষয়টি যাতে পুরোপুরি ধামাচাপা দেয়া যায় সেজন্য উপপরিচালক শামসুদ্দিন ওই অফিসের ক্যাশিয়ারসহ জেলা ও উপজেলা অফিসের ১১জন কর্মচারীকে বদলি প্রদান করেন।

এ প্রসঙ্গে নবাগত উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মহন্ত সঙ্গে কথা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি কেবলমাত্র অফিসে যোগদান করেছি, বিষয়টি সম্পর্কে কিছুটা অবগত হলেও যেহেতু বিষয়টি উর্দ্ধতনরা তদন্তে আছে তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না।