• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২-১২-২০২২, সময়ঃ বিকাল ০৩:২২

কংক্রিটের ব্রিজে উঠতে বাঁশের সিঁড়ি



ভবতোষ রায় মনা ►

কংক্রিটের ব্রিজ আছে, কিন্তু ব্রিজের দু’পাশের সংযোগ স্থলে অ্যাপ্রোচ সড়ক নেই। ব্রিজে ওঠার জন্য বাঁশের তৈরি সিঁড়ি, কখনো হাঁটু পানি ডিঙিয়ে আবার কখনো এক কিলোমিটার পথ ঘুরে যাওয়া আসা করছেন এলাকাবাসী। এ দুর্ভোগ ৮ বছর ধরে পোহাচ্ছে ৫০ হাজার গ্রামবাসী।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়নের টেংরাকান্দি গ্রামের গফুর মন্ডলের বাড়ি লংলগ্ন খালের ওপর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কংক্রিটের ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের এ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের একবছর পরেই বন্যায় দু’পাশের কাঁচামাটির অ্যাপ্রোচ সড়ক ভেঙে যায়। ফলে ওই পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে স্কুল, মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামবাসী ওই ব্রিজে উঠতে দু’পাশে বাঁশের সিঁড়ি তৈরি করেছে। কিন্তু শুধু মানুষ পার হতে পারলেও চরের যানবাহন ও ভারীপণ্য পারাপার করা সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে হাঁটু পানি ভেঙে, আবার অনেকে এক কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করছে। এতে এ ইউনিয়নসহ আশপাশের ২০ গ্রাম এবং ফজলুপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। 

ফুলছড়ি ইউনিয়নের চরপারুল গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আজিজার রহমান বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও চরবাসীর কষ্ট আরও বেড়েছে। যখন ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়, সেই সময় ব্রিজের দুই প্রান্তে বালু ও ব্রিজের পাশ থেকেই মাটি তুলে রাস্তা বানানো হয়। ওই রাস্তা বন্যার পানিতে ভেঙে ধুয়ে মিশে যায়। তখন ব্রিজটি মাঝখানে রয়ে যায়, দু’পাশে খালের সৃষ্টি হয়। বেশকিছু দিন পর গ্রামবাসী ব্রিজের দুই পাশে বাঁশের সিঁড়ি বানিয়ে ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করছে। 

টেংরাকান্দি গ্রামের জাহিদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় কয়েকজন যুবকের উদ্যোগে ও গ্রামবাসীর সহায়তায় ব্রিজের দু’প্রান্তে বাঁশের দীর্ঘ সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। এখন সেটার ওপর দিয়ে মানুষ চলাচল করছে। কিন্তু কোন যানবাহন ও ভারীমালামাল পার করা যাচ্ছে না। এতে চরের কৃষকদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

ফুলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজহারুল হান্নান বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই ব্রিজটির দু’পাশে কোন রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে হাট-বাজার, স্কুল, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী ও গ্রামবাসীসহ প্রায় ৫০ হাজার মানুষ খুব কষ্ট করে যাতায়াত করছে। কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে সেতুর সংযোগ সড়ক করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে কাজ না হলে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফুলছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি যেহেতু এখনও ব্রিজটি দেখিনি, সেক্ষেত্রে কিছু বলতে পারছি না। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সরেজমিনে পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যতদ্রুত সম্ভব ব্রিজের দু’পাশে অ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরি করা হবে।

এ ব্যাপারে ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ বলেন, টেংরাকান্দি গ্রামে ব্রিজটি ৮ বছর ধরে এ অবস্থায় পরে থাকলেও কেউ কোন কর্ণপাত করে নাই। আমি সম্প্রতি ব্রিজটি দেখেছি এবং জেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে এলজিইডি জেলা প্রকৌশলী মো: ছাবিউল ইসলামের সঙ্গে কথাও হয়েছে। তিনি আমাকে আশ^স্ত করেছেন উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ব্রিজটি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেবেন।