• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৩০-৯-২০২২, সময়ঃ রাত ১০:০৪

এনটিআরসিএ নয়, শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে পরিচালনা পর্ষদ!



রংপুর প্রতিনিধি ►
২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা খর্ব করা হয়। এরপরেও ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতো কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চলতি বছরের ২৯ জুন কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সোনা মনি চাকমা । এতে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলেও এনটিআরসিএ বরাবরে চাহিদাপত্র পাঠাতে হবে। তারাই নিয়োগ সম্পন্ন করে এমপিওভুক্তির জন্য সুপারিশ করবে।  ইতোমধ্যে এনটিআরসিএ ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগদান কার্যক্রম শুরু করেছে এবং এনটিআরসিএর সুপারিশ পেয়ে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হচ্ছেন।  

কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে শনিবার(০১ অক্টোবর) আবারো রংপুরের মিঠাপুকুরের শুকুরেরহাট ডিগ্রি কলেজের সেই বিতর্কিত ও অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। এবারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।  বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে সর্বত্র ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।  

এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর রংপুর সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অতি গোপনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শুকুরেরহাট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন নিয়োগ বোর্ডের প্রধান সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ। বিধি বহির্ভূত ওই শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল করতে বাধ্য হন তিনি। এ নিয়ে দৈনিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ টিভি চ্যানেলে খবর প্রকাশ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করেন। কিন্তু এতো কিছুর পরেও স্থগিত রাখা অবৈধ ওই নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে আবারো মরিয়া হয়ে উঠেছে নিয়োগ সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার শুকুরেরহাট ডিগ্রি কলেজে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে প্রভাষক পদে শনিবার (১ অক্টোবর) ইংরেজি,  রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, ইসলাম শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং দর্শন বিষয়ে নিয়োগ দেওয়ার আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে ওই কলেজের গোলজার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়েছে। আর তার সহযোগিতায় কলেজ গর্ভর্নিংবডির সভাপতি সেলিম মন্ডল নিয়োগ প্রার্থীর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দায়সারা নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলজার হোসেনের এক বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় তাকে অপসারণ করাসহ তার নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২০ আগস্ট জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এলাকার অভিভাবক ও সাধারন মানুষ ওই অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলজার হোসেন বিধিবহির্ভূতভাবে চেয়ার আঁকড়ে ধরে আছেন। তিনি কলেজের ৫টি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য চলতি বছরের ৩১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এমন কি বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি নানা ফন্দি-ফিকির চালিয়ে যাচ্ছেন। তার অপসারণের দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিবসহ ৮টি দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়।     

 শুকুরেরহাট ডিগ্রি কলেজের কয়েকজন অভিভাবক, শিক্ষক ও এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কলেজের সার্বিক অবস্থা খুবই ভঙ্গুর। জরাজীর্ণ শ্রেণি কক্ষসহ ভবনগুলোর অবস্থা নাজুক। কলেজ তহবিলে নেই অর্থ। বিভিন্ন উৎসবে নিজস্ব তহবিল থেকে শিক্ষক-কর্মচারিদের কপালে জোটে না প্রাপ্য ভাতা। নতুন শিক্ষক নিয়োগ দানে কলেজের ব্যয়বহন করার মত নিজস্ব সক্ষমতাও নেই। এ অবস্থায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গ্রামের সহজ-সরল চাকুরী প্রত্যাশীদের ফাঁদে ফেলে সৃষ্ট পদে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন সভাপতি সেলিম মন্ডল ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলজার হোসেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা খর্ব করে। এরপরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গোপনে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়। পরে চলতি বছরের ২৯ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সোনা মনি চাকমা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের নির্দেশ দেয়, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলেও এনটিআরসিএ বরাবরে চাহিদাপত্র পাঠাতে হবে। তারাই নিয়োগ সম্পন্ন করে এমপিওভুক্তির জন্য সুপারিশ করবে। এরপরেও শুকুরেরহাট ডিগ্রি কলেজর সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যে নেমেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ডিগ্রি পর্যায়ের কলেজগুলোতে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ দানের অনুমতি দেওয়া আছে।

শুকুরেরহাট ডিগ্রি কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ গোলজার হোসেন বলেন, একটি মহল এর আগে নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। এবারে বিধি-বিধানে কোন গ্যাপ নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

কলেজ গভর্ণিংবডির সভাপতি সেলিম মন্ডল বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী সৃষ্ট পদে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগদানে কোন বাধা-বিপত্তি নেই। এবারে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. আব্দুল মতিন লস্কর গণমাধ্যমকে বলেন, বন্ধ করে দেওয়া নিয়োগ নতুন করে নেওয়া হচ্ছে বলে তা আমার জানা নেই।##