- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ৭-১২-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১০:৪৬
আজ গাইবান্ধা হানাদারমুক্ত দিবস
নিজস্ব প্রতিবেদক►
আজ ৭ ডিসেম্বর, গাইবান্ধা হানাদারমুক্ত দিবস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয় গাইবান্ধা। বিজয়ের আনন্দে ফেটে পড়ে গাইবান্ধার মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ।
দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় র্যালি ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে হানাদারমুক্ত দিবস উদযাপন কমিটি।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের এই দিনে কোম্পানি কমান্ডার বীর প্রতীক মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের কালাসোনার চর থেকে বালাসী ঘাঁট হয়ে গাইবান্ধা শহরে ঢোকে। এদিকে, তাদের শহরে প্রবেশের খবর পেয়ে আগের রাতেই গাইবান্ধা শহরের স্টেডিয়ামে অবস্থিত পাক সেনা ক্যাম্পের সৈনিকরা রংপুর ক্যান্টনমেন্টের দিকে পালিয়ে যায়। ফলে মুক্তযোদ্ধা একপ্রকার বিনা লড়াইয়েই তৎকালীন এসডিও মাঠে (স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ) মুক্তিযোদ্ধা ও জনতা মিলে জয়ের আনন্দে ফেটে পড়ে। এখানে মাহবুব এলাহী রঞ্জু গাইবান্ধাকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করে লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন।
এর আগে ১৭ এপ্রিল বিকেলে পাক হানাদার বাহিনী মাদারগঞ্জ ও সাদুল্যাপুর হয়ে গাইবান্ধা ঢোকে। তারা টিঅ্যান্ডটির ওয়ারলেস দখল করে। পরবর্তী সময়ে গাইবান্ধা স্টেডিয়ামে (বর্তমান শাহ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম) ঘাঁটি করে। এই ঘাঁটি থেকেই তারা শহর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ, নারী নির্যাতন চালাতে থাকে। তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে অসংখ্য মানুষ ধরে এনে হত্যা করার পর মাটিতে পুঁতে রাখে। বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটের পাশেও অসংখ্য লাশ সে সময় পুঁতে রাখা হয়। তাই এই স্থানগুলো পরে বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এরমধ্যে গাইবান্ধা স্টেডিয়ামের দক্ষিণ অংশে এবং স্টেডিয়ামের বাইরে অসংখ্য মানুষ হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। প্রতি রাতেই স্টেডিয়ামের পাশে কফিল শাহের গোডাউন নামে পরিচিত প্রাচীর ঘেরা এই এলাকায় দালালদের সহায়তায় অসহায় মানুষদের ধরে এনে পাকসেনারা তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করতো। নারীদের এখানে ধরে এনে ধর্ষণের পর হত্যা করা হতো। পার্শ্ববর্তী রেল লাইনের পাশে গর্ত করে পুঁতে রাখা হতো লাশ।
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো গাইবান্ধায়ও মুক্তিযোদ্ধা ও পাক সেনাদের লড়াই অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা খবর পায় পাকসেনারা গাইবান্ধা ছেড়ে চলে গেছে। ৬ ডিসেম্বর সকালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর দু’টি বিমান গাইবান্ধা রেলস্টেশনের পাশে বোমা ফেলে এবং বিকালে ট্যাংক নিয়ে মিত্রবাহিনী প্রবেশ করে শহরে। এদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ৭ ডিসেম্বর সকালে বিজয়ীর বেশে হাজার হাজার মানুষের আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে শহরে প্রবেশ করে।
এর আগে, ৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয় গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি ও সাঘাটা থানা। এছাড়া আগামী ৮ ডিসেম্বর পলাশবাড়ী থানা, ১০ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জ ও ১২ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় গোবিন্দগঞ্জ থানা।
গাইবান্ধার যুদ্ধগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হল: বাদিয়াখালীর যুদ্ধ, হরিপুর অপারেশন, কোদালকাটির যুদ্ধ, রসুলপুর স্লুইস আক্রমণ, নান্দিনার যুদ্ধ ও কালাসোনার যুদ্ধ।