- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ১৩-৫-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১০:৫০
আঙিনায় সোনালী ধান, ফলনে খুশি কৃষক
কায়সার রহমান রোমেল, গাইবান্ধা►
গাইবান্ধার সাত উপজেলায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে। চাষির বাড়ির আঙিনায় সোনালী ধানের স্তুপ। জেলার গ্রাম-শহরের বেশিরভাগ এলাকা পাকা ধানের মৌ-মৌ গন্ধে মেতে উঠেছে। চাষি পরিবারের সদস্যরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ পাকা ধান কাটছেন, কেউবা মাড়াইয়ে ব্যস্ত। পরিবারের ছোট-বড় সবাই মিলে সেই ধান সিদ্ধ ও শুকাতে দিন-রাত কাজ করছেন। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় অনেকটা নির্বিঘ্নেই নতুন ধান ঘরে তুলতে পারছেন কৃষক। বাজারে ধানের ভালো দামও পাচ্ছেন তাঁরা।
কৃষিবিদরা বলছেন, এ অঞ্চলে মৌসুমের শুরু থেকে এবার আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। এছাড়া আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ, জাত নির্বাচন এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় সেচ-সার ও কীটনাশক প্রয়োগে প্রতি হেক্টর জমিতে বেড়েছে ধানের উৎপাদন। ফলে যে কোনো বছরের তুলনায় এবারের ভালো ফলন কৃষকের মনে বাড়তি আনন্দ জুগিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধা কার্যালয় সূত্র জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও নিবিড় পরিচর্চায় এ বছর ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা তাঁদের। এবার হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ব্রি-২৮, ব্রি-২৯, ব্রি- ৮১, ব্রি- ৮৮, ব্রি- ৮৯, ব্রি- ৯২ ও ব্রি- ৯৮ জাতের ধান আবাদ বেশি হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেতের ধান কাটা শেষ হয়েছে। এ বছর জেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর, গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ২১ হাজার ৩০০ হেক্টর, পলাশবাড়ীতে ১১ হাজার ৮০৫ হেক্টর, সাদুল্লাপুরে ১৪ হাজার ৪০০ হেক্টর, গোবিন্দগঞ্জে ৩১ হাজার ১০৫ হেক্টর, ফুলছড়িতে ৮ হাজার ৩০০ হেক্টর এবং সাঘাটা উপজেলায় ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে হয়েছে ইরি-বোরো ধান চাষ। এ থেকে প্রায় ৮ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল কৃষকরা উৎপাদন করতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।
চাষিরা বলছেন, এবার প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় দেখা দেয়নি। সার-কীটনাশক সময়মতো পেয়েছেন। ধানে রোগবালাইয়ের আক্রমণ ছিল না বললেই চলে। এবার ফলন প্রত্যাশারও অধিক খুবই ভালো হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ, সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৩ মণ ধান পেয়েছেন তাঁরা। পক্ষান্তরে এক বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে গড়ে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। জাতভেদে (মোটা-চিকন) শুকনো ধান ৮৭৫ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা মণদরে বিক্রি করতে পারছেন তাঁরা। খরচ বাদে ধান বিক্রি করে বিঘাপ্রতি লাভ হচ্ছে ৯ হাজার ৩০০ টাকা। এতে নতুন আশা দেখছেন কৃষকেরা।
তবে হাইব্রিড জাতের ধান নিয়ে চিন্তায় আছেন কৃষকেরা। এসব ধান এখন সোনালি রং ধারণ করেছে। ধান কাটতে এখনো দুই থেকে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে চাষিদের। বৈশাখীর তা-ব আর উজানের ঢলের পানিতে এসব ধানক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক রাশেদুজ্জামান বলেন, এ বছর শ্রমিকসংকটের কারণে বিপাকে পড়েছিলেন এলাকার অনেক চাষি। তবে আবহাওয়া ভালো থাকায় অনেকটা নির্বিঘেœ ক্ষেতের ধান এবার ঘরে তুলতে পারছেন তাঁরা। এবারের বোরো আবাদে সার, কীটনাশক ও সেচসহ সকল কৃষি উপকরণের মুল্য বেড়ে যাওয়ায় ধানের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। আর সরকার প্রতি মন বোরো ধানের দাম নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ২৪০ টাকা। বর্তমান বাজারে আধা শুকনো প্রতি মন চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে ৯শ টাকা দরে। এই দামে কৃষকের পোষাচ্ছে না। এ ছাড়া কৃষক সরকার নির্ধারিত দাম কোন দিনই পায় না। ফলে ফলন ভালো হলেও বর্তমান বাজারে ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকরা।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বোরোধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ ধান কাটা হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। প্রাকৃতিক তেমন কোনো দুর্বিপাক হয়নি। এ জন্য জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই কৃষকদের ধান ঘরে তুলতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগ থেকে।