• মাধুকর প্রতিনিধি
  • ১০ ঘন্টা আগে

কাগজ দিয়ে কলম বানিয়ে সাড়া ফেলেছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শরিফুল



ভবতোষ রায় মনা, গাইবান্ধা►

ইচ্ছে শক্তি থাকলে সব কিছুই সম্ভব। যার জলন্ত উদাহরণ গাইবান্ধার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শরিফুল ইসলাম। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পরিবেশবান্ধব কাগজের কলম তৈরি করে এলাকায় সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। তার তৈরি করা পরিবেশবান্ধব কলম এখন এলাকায় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

গাইবান্ধা শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দুরে বোয়ালী ইউনিয়নের উত্তর ফলিয়া গ্রামে শরিফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানে বসে কাগজের কলম তৈরি করছে। জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও দু’হাতের ছোঁয়ায় মুর্হুতের মধ্যেই তৈরি করে ফেলছেন একেকটি কলম। কলমের পাশাপাশি তিনি তৈরিও করছেন খাতা। প্রতিমাসে গড়ে ১ হাজার কলম ও ৫শ’ খাতা পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করেন। শরিফুলের তৈরি খাতার দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা। প্রতিটি কলম বিক্রি করেন ১০ টাকায়। উৎপাদন খরচ বাদে প্রতিমাসে যে টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে তাদের সংসার চলে। 

শরিফুল ইসলাম সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের উত্তর ফলিয়া গ্রামের মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে। সে গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে এসএসসি পাশ করেন। ২০১৭ সালে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ও ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করা দরকার সেই ভাবনা থেকে তার প্রিয় মানুষদের পরামর্শে কাগজের কলম ও খাতা তৈরির পথ বেঁছে নেন। 

কয়েকটি কাগজের কলম বাজার থেকে কিনে নিয়ে এসে খুঁলে খুঁলে সে কলম তৈরির কাজটি শেখেন। দুই মাসের নিরলস প্রচেষ্টার পর ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তিনি সফলতা লাভ করেন। কলম তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। প্রথমে বিভিন্ন রঙের কাগজের মধ্যে কালির শীষ পেঁচিয়ে আঠা দিয়ে ভালোভাবে মুড়ে দেওয়া হয়। সবশেষে, কলমটিকে রোদে শুকিয়ে শক্ত করা হয়। এভাবেই তৈরি হয় পরিবেশ-বান্ধব কাগজের কলম। তার তৈরি করা পরিবেশবান্ধব কলম এখন এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

উত্তর ফলিয়া গ্রামের প্রতিবেশি ইতি আক্তার বলেন, প্রতিবন্দী শরিফুলের কাজে গ্রামের সবাই খুশি। ভালো মানুষও যাদের চোখ আছে, তারাও এধরণের ভালো কাজের উদ্যোগ নেয় না।

শরিফুলের মাতা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, নিজে নিজে সে ইনকাম করে, এটা ছাড়াতো অন্য কোনো ইনকাম করতে পারবে না। আল্লাহ সহায় থাকলে সব কিছুই করা সম্ভব। তবে তিনি বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন ছেলের জন্য। 

উদ্যোক্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, এ ব্যবসা করতে গিয়ে পর্যাপ্ত সহযোগিতা ও মূলধনের অভাব। ব্যাক্তি অথবা সরকারিভাবে এককালীন আর্থিক সহায়তা পেলে ব্যবসার উন্নতি করতে পারবো। 

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ আল হাসান জানান, শরিফুলে ইসলামের বিষয়টি আমি জানলাম তিনি একজন শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। তিনি কষ্ট করে শিক্ষার ব্যয় নির্বাহ করছেন। তাকে সহায়তা করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি যদি কোনো ঋণ চান যুবউন্নয়ন হোক, কিংবা সমাজসেবা দপ্তরে মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে।