- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ২৩-১২-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১১:০০
৩৬ প্রকারের চা বিক্রি করে স্বাবলম্বী পলাশবাড়ীর মোস্তাফিজুর
সোহেল রানা, পলাশবাড়ী►
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ৩৬ পদের চা বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন চা বিক্রেতা মোস্তাফিজুর রহমান। দোকানটি উপজেলা সদরের রাব্বী মোড় মমজিদ সংলগ্ন জায়গায় অবস্থিত।
মোস্তাফিজুর রহমান গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের নুরপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে ৮ বছর বয়স থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি কর্মজীবন শুরু করেন। কাজ-কর্ম জীবনেও তিনি এসএসসি পাশ করেন। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারনে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে ৮ বছর বয়স থেকে মোস্তাফিজুর রহমানকে। অল্প বয়সে অন্যান্য কাজ করলেও নিজের ও পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তনে ১৪ বছর পূর্বে ঢাকায় যান। পরে ঢাকা থেকে ফিরে এসে পলাশবাড়ী এসএম পাইলট বিদ্যালয়ের পুরনো হাইস্কুল মার্কেটে ১১৫ টাকা দিয়ে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন।
শুরুতে ২ পদের রং চা ও দুধ চা দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে ৩৬ পদের চা বাড়িয়ে এখন চা বিক্রি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। দোকানের নাম দিয়েছেন মাইশা টি স্টোল। মহাসড়কের কাজ চলমান থাকায় দোকান সরিয়ে নিয়ে এসে রাব্বী মোড় মসজিদ সংলগ্ন দোকান দিয়েছেন।
৩৬ পদের চা বিক্রিতে মোস্তাফিজুর রহমানের দোকানে বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ চা খেতে ভীড় জমাচ্ছেন। উন্নতমানের ও নানান রঙে ৩৬ পদের উন্নতমানের ‘চা’ এর নাম মূল্য তালিকা অনুযায়ী, স্পেশাল খেজুর গুরের চা ২০ টাকা, স্পেশাল গাওয়া চা ৫০ টাকা, মালাই চা ৩০ টাকা, ভ্যানিলা চা ৩০ টাকা, মটকা চা ৬০ টাকা, মরিচ চা ২০ টাকা, তেঁতুল চা ২০ টাকা, মাল্টা চা ২০ টাকা, চকলেট কফি ২০ টাকা, মিল্ক কফি ৪০ টাকা, ব্লাক কফি ১০ টাকা, চকলেট চা ২০ টাকা, ক্যাপাচিনো কফি ৫০ টাকা, ব্রাউন কফি ৬০ টাকা, হরলিক্স চা ৪০ টাকা, দুধ চা ১০ টাকা, লাল চা ০৫ টাকা, জিঞ্জার টি ২০ টাকা, মেডলি বক্স ২০ টাকা, অর্থোডক্স ব্লাক টি ৩০ টাকা, অর্থোডক্স ওলং টি ৩০ টাকা, লেমন গ্রাস হারবাল ইনফিউশন টি ৩০ টাকা, অর্থোডক্স গ্রীণ টি ২০ টাকা, নার্দান টি ৭০ টাকা, নর্দাণ হারমোন ২৫ টাকা, ফাস্ট ফ্লাস টি ২০ টাকা, গ্রীণ টি ১৫ টাকা, তুলসি টি ২০ টাকা, গ্রীণ লেমন গ্রাস টি ২০ টাকা, বাইমু ডাল ৪০ টাকা, টার্মারিক ইনফিউশন ২০ টাকা, প্রিস্টিন ব্লাক টি ২০ টাকা, ব্লাক টি ১০ টাকা, জেসমিন গ্রীণ টি ২০ টাকা, মাসালা টি ২০ টাকা, গ্রীন মিন্ট টি ২৫ টাকা।
দোকানে টাঙানো ব্যানারে চা এর নাম ও মূল্য দেওয়া রয়েছে সেই অনুযায়ী অর্ডার করে একেক চা এর একেক রকম স্বাদে চা খেতে ভীড় জমান বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ। ৩৬ পদের চা মানুষের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করে সবার মুখে মুখে আলোচনায় এখন মোস্তাফিজুর রহমান।
মাইশা টি স্টোলে চা খেতে মানুষের ভীড় ও বেচা বিক্রিতে একা সামাল দিতে না পারায় মোস্তাফিজুর রহমান তার ছোট ভাই আব্দুল মোতাল্লিব প্রধান দোকানে সহযোগীতা করলেও চা বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় দৈনিক জনপ্রতি ৪০০ টাকা হারে রিদয় মিয়া ও স্বাধীন মিয়া নামে দুই জন কর্মচারী রেখেছেন।
দোকানটি সকাল ১০ টা থেকে চালু শুরু করে রাত ১২ টা পর্যন্ত খোলা রেখে ব্যবসা করছেন। মাইশা টি স্টোলে ৩৬ পদের চা বিক্রি দৈনিক মোট বিক্রি হয় প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার টাকা। দৈনিক মোট ব্যয় বাবদ খরচ হয় ১৪ হাজার টাকা দোকানের কর্মচারীসহ অন্যান্য সব খরচ বাদে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা লাভের অংশ বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন বলে জানান।
মোস্তাফিজুর রহমানের পরিবারে রয়েছে ৮ জন সদস্য। স্ত্রী গৃহিনী শাপলা বেগম। দুই মেয়ে মাইশা আকতার (৬) ও মিম্মা আকতার (৫) দুজন কেজি স্কুল পলাশবাড়ী স্টুডেন্ট কেয়ার সেন্টার প্লে পড়াশনা করে। তার পিতা আবু বক্কর সিদ্দিক, মাতা-মোর্শেদা বেগম, দ্বিতীয় ভাই মোকাব্বর রহমান ডিগ্রীতে পড়াশুনার পাশাপাশি চায়ের দোকানের পাশেই সে চপ এর দোকানে ব্যবসা করছেন। তৃতীয় ভাই আব্দুল মোতালিস্নব প্রধান এসএসসি পরীক্ষার্থী তিনিও পড়ালেখার পাশাপাশি দোকানে সহযোগিতা করেন। মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী শাপলা বেগম বাড়ি কাজের পাশাপাশি দোকানের দুধ জাল করাসহ অন্যান্য কাজে সহযোগীতা করেন। তার বাবা দোকানে দুধ নিয়ে আসাসহ অন্যান্য কাজে সহযোগীতা করেন।
মাইশা টি স্টোলে চা খেতে আসা মধু মিয়া, আশরাফুল ইসলাম জানান আমরা নিয়মিত এখানে চা খেতে আসি। এখানে চায়ের গুনগত মান অত্যন্ত ভালো সে চা অনেক সুন্দর করে বানিয়ে দেন। সে অত্যন্ত ভাল মনের একজন মানুষ তবে তার ব্যবসা পুঁজি থাকলে আরও ভালো কিছু করতো। তাকে সরকারী ভাবে ঋণ অথবা তাকে সহযোগীতা করা প্রয়োজন।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পারিবারিক ভাবে তেমন কোন সম্পদ নেই তবে এই দোকান দিয়ে অল্প কিছু টাকা জমালেও পারিবারিক সমস্যার কারনে তা খরচ করতে হয়েছে। তবে সরকারী ভাবে ঋণ বা কোন সহযোগীতা করলে ব্যবসাটা বাড়িয়ে নিতে পারতাম। তাছাড়া এভাবে চললে কিছু করতে পারবো বলেও তিনি জানান।