• মাধুকর প্রতিনিধি
  • ২ ঘন্টা আগে

সুন্দরগঞ্জে তিস্তার ভাসমান পতিত চরে কুমড়া চাষ



তিস্তা আকন্দ, সুন্দরগঞ্জ►

তিস্তার ভাসমান পতিত চরের জমির মালিক কে জানেন না মশিউর রহমান। চর জেগে উঠায় শুরু করেন কুমড়া চাষ। গত বছর কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামের চরে প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে কুমড়া চাষ করে লাভ করেছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। চলতি মৌসুমে ৩০ বিঘা জমিতে কুমড়া চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু করেছেন বলেন মশিউর রহমান। তিনি আশা করছেন এ বছরও ১০ হতে ১২ লাখ টাকা লাভ হবে তার। 

এক বিঘা জমিতে কুমড়া চাষে খরচ ১০ হতে ১২ হাজার টাকা। প্রতিবিঘাতে কুমড়া পাওয়া যায় ৪০ হতে ৫০ মন। বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি কুমড়া পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০ হতে ৫০ টাকা দরে। মশিউর আশাবাদী এতে করে বিঘাপ্রতি ২৫ হতে ৩০ হাজার টাকা লাভ হবে তার। কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে কুমড়া চাষ শুরু করেন তিনি। তার দেখে এখন অনেকে কুমড়া চাষ শুরু করেছে।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা, তারাপুর, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর চরাঞ্চল এখন সবুজের সমারহে ভরে উঠেছে। জেগে উঠা ধূ-ধূ বালু চরের প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে নানাবিধ ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে কুমড়া চাষ হয়েছে ২০ হেক্টর জমিতে। বিশেষ করে কাপাসিয়া ও হরিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে কুমড়া চাষের পরিমান বেশি। 

কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মঞ্জু মিয়া বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৪০ হতে ৫০ বছর ধরে তিস্তায় জমি-জিরাত খুঁয়ে যাওয়া পরিবারগুলো ভিন্ন জেলায় চলে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। কালের বির্বতনে ওইসব চরের জমি জেগে উঠলেও তারা খোঁজ কবর নিচ্ছেন না। জেগে উঠা চরগুলোতে স্থানীয় কিছু সংখ্যক প্রভাবশালী মহল কুমড়া, বাদাম, কাঁশখড়, আলু, ভূট্টা, তরমুজ, সূর্য্যমুখী, সোয়াবিন চাষাবাদ করে আসছেন। জমির মালিক এলে তাদেরকে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করে দিচ্ছেন অনেকে। তার ভাষ্য শুকনা মৌসুমে জেগে উঠা বালুচর এখন আবাদী জমিতে পরিনত হয়েছে। 

কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটি কাপাসিয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত জমির মালিকগণ এখন চরে এসে আশ্রয় পাচ্ছে না। তিস্তার বালুচর এখন জোর যার মুল্লুক তার। জেগে উঠা পতিত বালু চরে নানাবিধ ফসল চাষাবাদ করে এখন অনেকে বিত্তশালী হয়ে উঠেছে। কাপাসিয়া ইউনিয়নের বালু চরে এখন কুমড়া, তরমুজ, ভূট্টায় ভরে উঠেছে। তিনি নিজেও ৫ বিঘা জমিতে কুমড়া চাষ করেছেন। তার ভাষ্য চারগুন টাকা পরিবহন খররে ব্যয় হচ্ছে। সে কারনে লাভের পরিমান কমে যাচ্ছে।

বাদামের চর ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. লিটন মিয়া বলেন, দুই ফসলি জমিতে পরিনত হয়েছে তিস্তার বালু চর। চরের কৃষকরা প্রণোদনা ও ব্যক্তি উদ্যোগে বীজ এবং সার সংগ্রহ করে নানাবিধ ফসল চাষাবাদ করছেন। বিশেষ করে আমন ধান এবং খরিফ মৌসুমে কুমড়া, তরমুজ, ডাল, সূর্য্যমুখী, সরিষা, গম, ভূট্টা, অড়রহ, সোয়াবিন, পেয়াজ, বাদাম চাষাবাদ করছেন। চরের শতভাগ কৃষক প্রণোদনার আওতায় রয়েছে। প্রতিনিয়ত ফসল চাষাবাদে তাদেরকে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, কৃষিতে তিস্তার চরাঞ্চল এখন সম্ভাবনাময় জোনে পরিনত হয়েছে। জেগে উঠা চরের কৃষকরা একবারের ফসলের অর্থদিয়ে চলছে গোটা বছরের সংসার খরচ। কাপাসিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন চরের কুমড়া এখন এলাকার চাহিদা পুরুনের পর জেলার বাইরে রপ্তানি হচ্ছে।       

উপজেলা কৃষি অফিসার রাশিদুল কবির বলেন, প্রতিবছর বন্যার সময় পলি জমার কারনে তিস্তার বালুচর অত্যন্ত উরর্বর। সে কারনে মৌসুম ভিত্তিক যে কোন জাতের ফসল চাষাবাদে দারুন উপযোগী। বর্তমানে সবজির চাহিদা মেটাতে চরের কুমড়া অনেকটা অভাব পুরুন করছে। কাপাসিয়া এবং হরিপুর চরে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারজাত শুরু হয়েছে। চরের পতিত জমিতে কুমড়া চাষ করে অনেকে এখন স্বাবলম্বী ।