- মাধুকর প্রতিনিধি
- এই মাত্র
তাজরীন গার্মেন্টস ট্র্যাজেডি: একযুগেও শেষ হয়নি বিচার
মাধুকর ডেস্ক►
ঢাকা জেলার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনস গার্মেন্টসের অগ্নিকাণ্ডের এক যুগ হচ্ছে আজ রবিবার (২৪ নভেম্বর)। ১২ বছর আগে ওই ফ্যাক্টরিতে আগুনে পুড়ে মারা যান ১১২ জন শ্রমিক। আহত হন একশ’র বেশি শ্রমিক।
এ ঘটনায় অবহেলার অভিযোগে সে সময় পুলিশ একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। একবছরের মধ্যে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এরপর ২০১৫ সালে গার্মেন্টসের মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত। ওই বছরের ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। এরপর থেকে দীর্ঘ ৯ বছরে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পেছানো হয় ৬৩ বার। এরমধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে মাত্র ১৩ জন সাক্ষী উপস্থিত করে। এতে মামলার বিচারে তৈরি হয় দীর্ঘসূত্রতা। ফলে বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম একটি মামলা করেন। এরপর ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান আদালতে ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু করেন আদালত। এরপর থেকে চলতি বছর (২০২৪) পর্যন্ত ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। সর্বশেষ এ বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দিয়েছেন মালা নামে একজন শ্রমিক। সাক্ষে তিনি বলেন, আগুন লাগার পরও কারখানার ফ্লোর ম্যানেজাররা আগুন লাগে নাই বলে শ্রমিকদের কাজে মন দিতে বলেন। কিছুক্ষণ পর বিদ্যুৎ চলে যায়। ধোঁয়ায় পুরো ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। নিচে নেমে কেসি গেটে তালা পাই। এরপর তিন তলায় উঠে যাই। কয়েকজন মিলে জানালা ভেঙে ভবন থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ি। এরপর দীর্ঘ দিন হাসপাতালে ছিলাম।
এ মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন— প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর, শামীম ও শহীদুজ্জামান দুলাল। আসামিদের মধ্যে আল আমিন, রানা, শামীম ও মোবারক হোসেন পলাতক রয়েছেন। আর বাকি সব আসামি জামিনে আছেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়— কারখানা ভবনটি ইমারত নির্মাণ আইন মেনে করা হয়নি। ভবনটিতে জরুরি বহির্গমন পথ ছিল না। তিনটি সিঁড়ির মধ্যে দুটি নিচতলার গুদামের ভেতরে এসে শেষ হয়েছে। ওই গুদামে আগুন লাগার পর শ্রমিকেরা বের হতে চাইলে কারখানার ম্যানেজার শ্রমিকদের বাধা দিয়ে বলেন, আগুন লাগেনি, অগ্নিনির্বাপণের মহড়া চলছে। এরপর তিনি বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেন।
শুরু থেকে এই মামলার কার্যক্রম মনিটরিং করছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সবুজ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত ১২ বছর আমরা শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, সংস্কৃতি কর্মী এবং গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম তাজরীন মামলাটির কার্যক্রমকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। প্রত্যেকটি সাক্ষ্য-শুনানিতে উপস্থিত থেকেছি। বছরের পর বছর আদালতে আসা-যাওয়া এবং সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমরা মনে করি, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার পেছনে মামলাটি পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের দায়সারা ভাব দায়ী। আমরা তিল তিল করে প্রত্যক্ষ করেছি যে, বিচারকার্য পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষের এই ব্যবস্থাগত অবহেলা, ঔদাসীন্য মালিকের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।
এ মামলার সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রঞ্জিত চন্দ্রের পিতা মারা যাওয়ায় তাৎক্ষণিক বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা নিয়োগ পাওয়ার পর এ মামলার কোনও তারিখ পড়েনি। সামনের ২৭ নভেম্বর মামলার তারিখ আছে। সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার জন্য চেষ্টা করবো।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মোট ১২৩ জন নিহত হন। আহত হন ১০৪ জন।
তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন