• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১২-১১-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১০:২২

গাইবান্ধায় এখনও ওজনে বিক্রি হচ্ছে রুটি!



ভবতোষ রায় মনা►

শুনতে অবাক লাগলেও প্রাচীন আরবের মতো গাইবান্ধায় এখনও ওজন করে বিক্রি হচ্ছে আটার রুটি। প্রতিদিন ভোরবেলা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ দোকানগুলো। গ্যাসের চুলায় অনবরত গরম গরম রুটি ভেজে, তার সঙ্গে ঝাল আলুভর্তা, অ্যাংকর ডাল, সবজি এবং ডিম ভেজে পরিবেশন করছে বিক্রেতা। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ওজন করে রুটি, আর ইচ্ছেমত ৫/১০ টাকার ডাল, আলুভর্তা ও সবজি নিচ্ছেন। এই রুটির দোকান চালিয়ে অনেক দরিদ্র পরিবার হয়েছে স্বাবলম্বী। 

গাইবান্ধা জেলা শহরের পুরাতন বাজারের ভেতরে গড়ে উঠেছে সাত-আটটি আটার রুটির দোকান। এসব দোকানে রুটি বিক্রির চাহিদা ও সাফল্য দেখে শহরের নতুন বাজার, হকার্স মার্কেট ও কাচারী বাজারেও গড়ে উঠেছে একই রকম নতুন কয়েকটি রুটির দোকান। দোকানের সামনের অংশে গ্যাসের চুলা, ভিতরে দু‘পাশে বসার বেঞ্চ, পাশেই তৃষ্ণা মিটানোর জন্য রয়েছে পানির ব্যবস্থা। সরিষার তেলে ভাজা রুটির সঙ্গে গুড়, সরিষার তেলে মাখা পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ ফ্রিতে দেওয়া হয়। 

এছাড়াও সরিষা তেলে ভাজা ৫ টাকায় ঝাল আলুভর্তা, ৫ টাকায় অ্যাংকর ডাল, ১০ টাকায় সবজি এবং ২০ টাকায় ডিমভাজি। শুধু দরিদ্ররা নয়, বরং সব শ্রেণি-পেশার মানুষই এখানে রুটি খেতে ও কিনতে আসে। বিশেষ করে দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ দোকানের বেঞ্চে বসেই রুটি খেয়ে তাদের ক্ষুধা মেটায়। রুটি বিক্রেতারা দরিদ্র অবস্থা থেকে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। 

সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের পূর্বকোমরনই মিয়াপাড়া গ্রামের রুটি বিক্রেতা শফিকুল ইসলামের কর্মচারী আমির হোসেন বলেন, তার দোকানে প্রতিদিন ২০ ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি আটার রুটি বিক্রি হয়। একই গ্রামের ইকরামুল ও সিয়াম জানান, তাদের দোকানে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি আটার রুটি বিক্রি হয়। রুটি বিক্রেতা গোদারহাটের মন্টু মিয়া ও ধানঘরা গ্রামের সাহারুলও জানালেন একই কথা। সাতটি দোকানের বিক্রির গড় হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ মণ আটার রুটি এখানে বেচাকেনা হয়।

ক্রেতা রিকসা চালক করিম মিয়া বলেন, সারাদিন রিকসা চালিয়ে ক্ষুধা লাগলে এখানে এসে ইচ্ছে মত ২০০ গ্রাম, আধা পোয়া, হাফ কেজি গমের আটার রুটি কিনে নিয়ে খাচ্ছি। তাতে আমাদের সুবিধা, যতটুকু দরকার ততটুকু কিনে খেতে পারছি।

পুরাতন বাজারে প্রথম রুটি বিক্রির দোকান চালু করেন আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, ১৯৭৮ সালের দিকে চর ভাঙার কারণে আমি পরিবার নিয়ে চলে আসি গাইবান্ধায়। পরে পুরাতন বাজারে খড়ি হাটিতে এই রুটির ব্যবসা শুরু করি।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা চেম্বার অব কমার্স-এর পরিচালক আলী কায়ছার বাবুল বলেন, জেলার সব জায়গা থেকে লোকজন আসে, ক্ষুধা নিবারণের জন্য পুরাতন বাজারে রুটি দোকান রয়েছে, সেখানে রুটি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে। ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি, অন্যান্য জায়গায় রুটি বা পরোটা পিচ হিসেবে বিক্রি হয়, কিন্তু এখানে ওজন করে বিক্রি হয় রুটি।