• মাধুকর প্রতিনিধি
  • ৫ ঘন্টা আগে

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভালো নেই নিম্ন আয়ের মানুষ



তিস্তা আকন্দ, সুন্দরগঞ্জ►

পানের বরজসহ খেত-খামারে দিনমজুরের কাজ করতেন উপজেলার শান্তিরাম গ্রামের দানেজ মিয়া। গত ২০ দিন হতে কোন কাজ-কর্ম নেই তার। স্ত্রীসহ চার সদস্যের সংসার তার। তার বয়স প্রায় ষাট বছর। অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে শুরু করেছেন ভিক্ষাবৃত্তি। 

দানেজ মিয়ার ভাষ্য সারাদিন ভিক্ষাবৃত্তি করে দেড় হতে দুইকেজি চাল এবং ২০ হতে ৫০ টাকা পাওয়া যায়। ভাতের চাল জুটলেও তরিতরকারির কেনা সম্ভাব হচ্ছে না। সে কারণে লবন ভাত খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। বর্তমানে রাস্তাঘাটে এবং খেত-খামারে কোন প্রকার কাজ-কর্ম নেই। পেটের দায়ে এই ভিক্ষার পথ বেঁচে নিয়েছি।

আজ চারদিন থেকে কলা ও পাউরুটি খেয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে দিন পার করছি।  কোথাও কোন কাজ নেই। এই ভাবে আর চলতে পারছি না বলেন পৌরসভার রাজমিস্ত্রীর জোগালি হাফিজার রহমান। স্ত্রী বাসাবাড়িতে কাজ করে যা পায়, তা দিয়ে দুই সন্তানের খোরাকি হয় না। তরিতরকারি তো দুরের কথা চাল ডাল কেনা যাচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কোন প্রকার ঠিকাদারী কাজ না থাকায় শ্রম বিক্রি করতে পারছি না।

ব্যাটারি চালিত অটো চালক স্বাধীন সরকার জানান, সারদিন অটো চালিয়ে বর্তমানে ৩০০ হতে ৪৫০ টাকার বেশি রোজগার করা সম্ভাব হচ্ছে না। যা দিয়ে প্রতিদিনের চাল,ডাল, তেল, লবন ছাড়া আর কিছু কেনা যাচ্ছে না। প্রতিটি জিনিসের দাম যে হারে বেড়েই চলছে, তাতে করে সংসার চালানো অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সরকারি ভাবে দ্রব্যমূল্যে যে হারে নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে তা মানছে কোন দোকানি।

মীরগঞ্জ বাজারের ভ্যান চালক হাফিজার মিয়া জানান, প্রতিদিন  রড়, সিমেন্ট ও টিনের  দোকানের ভাড়া খেটে ৪০০ হতে ৬০০ টাকা রোজগার হত। বর্তমানে সারাদিনে ৩০০ টাকা রোজগার হয় না। সংসার চালানো যাচ্ছে না। এনজিও থেকে লোন নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে।

সুন্দরগঞ্জ বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী হামিদুল হক জানান, মানুষের হাতে টাকা নেই। যারা ৫০০ টাকা খরচ করতেন আজ তারা ২০০ টাকা খরচ করছেন। একদিকে প্রতিটি পর্ণ্যেে দাম লাগামহীণ ভাবে বেড়ে চলছে, অন্যদিকে নিন্ম আয়ের মানুষের কোন কাজকর্ম নেই। অনেকে শুধূ পিয়াজ, মরিচ, লবন, তেল কিনে বাড়ি ফিরছে।

পৌরসভার হোটেল ব্যবসায়ী ঝন্টু দাস বলেন, গত একমাস থেকে ব্যবসা ভাল চলছে না। বিক্রি অনেক কমে গেছে। মানুষের হাতে টাকা নেই, যার কারনে অনেকে আর হোটেলে বসছে না। শ্রমিকদের মজুরি মিটানোর পর খালি হাতে বাড়ি ফেরতে হচ্ছে।

ঠিকাদার ছাগীর খান জানান, গত তিন মাস হতে সকল প্রকার ঠিকাদারী কাজ বন্ধ রয়েছে। সে কারনে শ্রমিকদের কোন ভাবে কাজে লাগা যাচ্ছে না। অনেক শ্রমিক দিনের পর দিন বাড়িতে বসে রয়েছে। পরিজন নিয়ে সংসার চালোনো তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। শ্রমিকরা দিন আনে দিন খায়, সেজন্য শ্রমিকরা এখন চরম বিপাকে। 

তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান,  উপজেলার একটি পৌরসভা ও পনেরটি ইউনিয়রে কমপক্ষে ২ লাখ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন। উপজেলার প্রায় আটটি ইউনিয়নের উপর দিয়ে তিস্তা প্রবাহিত। সে কারনে এই উপজেলার নিন্ম আয়ের মানুষের সংখ্য অনেক বেশি। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যে লাগামহীন ভাবে বেড়ে যাওয়ায় গ্রাম-গঞ্জের নিন্ম আয়ের মানুষজন চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসা মো. রাশিদুল কবির জানান, উপজেলার অন্তত ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে কৃষিতে কোন কাজ নেই। চরের কৃষকরা সবজি চাষাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামি ২০ দিনের মধ্যে আমনধান কাটামাড়াই শুরু হলে অনেক দিন মজুর খেত-খামারে কাজ শুরু করতে পারবেন। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মন্ডল জানান, সরকারি ভাবে কোন বরাদ্দ না থাকায় আপাতত সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে প্রকল্পের কাজ ফের শুরু হবে। তখন অনেক শ্রমিক কাজ করতে পারবেন।