• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২-১০-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১১:৪০

‘ভাংগন ঠ্যাকে দ্যাও হামাক’, আকুতি তিস্তাপাড়ের বাসিন্দার



তিস্তা আকন্দ, সুন্দরগঞ্জ

“ভাংগনের খবর পায়া বড় বড় অফিছাররা আইসে আর দেখি চলি যায়। পরে তামার আর খোঁজ পাওয়া যায় না। চেয়ারম্যান, নেম্বাররা কয়, হামরা তো ভাংগনের খবর দিয়ে অফিছার নিয়ে আসছি। তামরা দেখি গেইছে। কী ব্যাবস্থা নেয় তা তো তোমরা জানবার পাইবেন। মাসের পর মাস চলি যায়, কোন খবর হয় না। হামরা ত্র্যান চাইনে, হামাক ভাংগন ঠ্যাকে দেও।”

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের উত্তর লালচামার গ্রামে তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙন পরির্দশনে আসা পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আহসান হাবিবকে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন উত্তর লালচামার গ্রামের নদীগর্ভে বসতবাড়ি বিলিন হয়ে যাওয়া আব্দুল জব্বার মিয়া।

এ সময় গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক, ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।  

পানি নেমে গেলেও সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীতে ব্যাপক ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে উঠতি আমন ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলি জমি ও বসতবাড়ি নদীতে বিলিন হচ্ছে। গত সাত দিনের ব্যবধানে উপজেলা কাপাসিয়া ইউনিয়নের উত্তর লালচামার গ্রামে ১০টি বসতবাড়ি তিস্তায় বিলিন হয়ে গেছে ও ১৫টি বসতবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে এবং ১০০টি বসতবাড়ি ভাঙনের মুখে পড়েছে। 

উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। প্রতিবছর তিস্তায় পানি বাড়ালে বা কমলে এমনকি বন্যা দেখা দিলেই শুরু হয় নদী ভাঙন। যে ভাঙন চলতে থাকে মাসের পর মাস।  নদী পাড়ের মানুষের অভিযোগ, সরকার স্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোধ, ড্রেজিং, নদী খনন, ও সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রতি বছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি, হাজারও একর ফসলি জমি নদীতে বিলিন হচ্ছে।

কাপাসিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, হঠাৎ করে গত এক সপ্তাহ ধরে তিস্তা নদ তে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০টি বসতবাড়ি শতাধিক বিঘা জমির আমনক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বসতবাড়ি সরিয়ে নিয়ে গেছে অন্তত ৭০টি পরিবার। ভাঙনের মুখে পড়েছে শতাধিক বিঘা ফসলি জমিসহ ১০০টি বসতবাড়ি। তার ভাষ্য নদীতে পানি বাড়লে অথবা কমলে এবং বন্যা আসলে তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। চরের মানুষ এখন ত্র্যান চায় না, তারা স্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোধ চায়।

লালচামার গ্রামের আব্দুস ছামাদ মিয়া বলেন প্রতিবছর নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি, ফসলি জমি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। একজন চরবাসিকে এক মৌসুমে কমপক্ষে ২/৪ বার ঘরবাড়ি সরাতে হয়। আজও স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধের কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না।

কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মনজু মিয়ার দাবি নদী খনন, ড্রেজিং, স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে কল্পে বহুবার চাহিদা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু আজও কোন ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ হতে নেয়া হয়নি। শুধুমাত্র ভাঙন রোধে প্রাথমিক ভাবে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী ভাবে ভাঙন ঠেকানো না হলে চরবাসির দুঃখ কোন দিনও দুর হবে না। ভাঙনে প্রতিবছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি এবং হাজারও একর ফসলি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রাশিদুল কবির জানান, কাপাসিয়া শ্রীপুর, চন্ডিপুর  ও হরিপুর ইউনিয়নের কয়েকটি চরে তিস্তার ভাঙনে আমনক্ষেতসহ  অন্যান্য ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলি হচ্ছে। এতে করে কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মন্ডল জানান, কাপাসিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি চরে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। চেয়ারম্যান তালিকা করে পাঠাতে বলা হয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, সোমবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এই মহুত্বে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা ছাড়া আর কোন প্রকল্প হাতে নেই। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ সরকারের উপর মহলের সিদ্ধানের ব্যাপার।