• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৮-৮-২০২৪, সময়ঃ বিকাল ০৩:৫৯

গুগল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তায় যা করবেন



প্রযুক্তি ডেস্ক►

সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ যখন হয়ে উঠেছে পানির মতোই সহজ তখনও ওয়েবমেইলের জনপ্রিয়তা কমেনি এতটুকুও। অফিশিয়াল কোন ফাইল বা ডকুমেন্ট আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে এখনও স্ট্যান্ডার্ড মাধ্যম হিসেবে ই-মেইলই ভরসা বেশিরভাগ মানুষের। 

ই-মেইল কতটা জনপ্রিয় তা বোঝানোর জন্য কয়েকটি তথ্য দেয়া যাক। সারা বিশ্বে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি মানুষ বর্তমানে ই-মেইল ব্যবহার করে থাকে। আর তাদের মোট ই-মেইল অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটি। আরও অবাক হবেন জেনে যে, প্রতি সেকেন্ডে ৩০ লাখেরও বেশি ই-মেইল পাঠানো হয় পৃথিবীজুড়ে।

ওয়েবমেইল সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গুগলের ই-মেইল সেবা জিমেইল। বর্তমানে সারা বিশ্বে জিমেইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১.৮ বিলিয়ন বা ১৮০ কোটিরও বেশি এবং একজন ব্যবহারকারীর গড়ে ১.৭টি জিমেইল অ্যাকাউন্ট রয়েছে। প্রতিদিন ১২১ বিলিয়ন বা ১২১ কোটিরও বেশি ই-মেইল প্রেরণ করা হয় জিমেইল ব্যবহার করে।

তবে জিমেইলের গুরুত্ব কিন্তু কেবলমাত্র ই-মেইল পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। গুগলের পুরো প্রোডাক্ট ইকোসিস্টেমই এখন জিমেইলের সাথে যুক্ত। গুগল প্লে স্টোর থেকে শুরু করে গুগল ড্রাইভ, গুগল ফটোজ, গুগল মিট, গুগল অ্যাসিসট্যান্ট, ব্লগস্পট, গুগল কন্টাক্ট ও ক্যালেন্ডারের মতো গুগলের জনপ্রিয় সার্ভিসগুলো এক্সেস করার জন্য আগে গুগল অ্যাকাউন্টে লগইন করতে হয়। আর গুগল অ্যাকাউন্ট মানেই হচ্ছে জিমেইল অ্যাকাউন্ট, অর্থাৎ জিমেইল অ্যাকাউন্টে লগইন করার মাধ্যমে ব্যবহারকারী গুগলের পুরো প্রোডাক্ট ইকোসিস্টেম অ্যাক্সেস করার সুযোগ পায়।

এই প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবেই তাই জিমেইল বা গুগল অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। জিমেইল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বিধানে করণীয় বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক জিমেইল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ৮টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস: 

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করা:

অ্যাকাউন্ট সুরক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করা। পাসওয়ার্ডে অবশ্যই ছোট ও বড় হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও বিভিন্ন প্রতীক বা সিম্বল (যেমন: হ্যাশ (#), ডলার ($), পার্সেন্ট (%), অ্যাট (@) ইত্যাদি) থাকা উচিত। তবে জন্মতারিখ, ফোন নাম্বারের মতো ব্যক্তিগত তথ্য যেগুলো সহজেই যেকেউ জেনে যেতে পারে সেগুলো কোনভাবেই পাসওয়ার্ডে ব্যবহার করা উচিত নয়। অন্য কোন অ্যাকাউন্টে ইতোপূর্বে ব্যবহার করা হয়েছে এমন পাসওয়ার্ডও কোনভাবেই ব্যবহার করা উচিত নয়। সার্বিকভাবে বলতে গেলে, একটি ভালো, শক্ত পাসওয়ার্ড হচ্ছে এমন যেটা আপনার সহজে মনে থাকলেও অন্য কারও পক্ষে সেটা এমনকি অনুমান করাও অসম্ভব।

রিকভারি ফোন ও ইমেইল যুক্ত করা: 

অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রিকভারি ফোন ও ইমেইল যুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পাসওয়ার্ড আপনার কাছে যতই পরিচিত হোক না কেন, এমনটাতো হতেই পারে যে আপনি পাসওয়ার্ডটি ভুলে গেলেন। অথবা অন্য কোন কারণে আপনি লগইন করতে পারছেন না বা আপনার অ্যাকাউন্টটি বেহাত হয়ে গিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে জিমেইল অ্যাকাউন্টটি পুনরুদ্ধার করার জন্য অনুসরণ করতে হবে রিকভারি প্রসেস। আর সেজন্য আগে থেকেই আপনার অ্যাকাউন্টে যুক্ত থাকতে হবে একটি রিকভারি ফোন ও ভিন্ন একটি ই-মেইল। 

টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করা:

আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা দ্বিগুণ শক্তিশালী করে তুলতে পারেন টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ফিচারটি চালু করার মাধ্যমে। এই ফিচারটি চালু করার জন্য একটি ফোন নাম্বার যুক্ত করে দিতে হবে। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক, রিকভারি ফোন নাম্বার ও টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন-এ দেয়া ফোন নাম্বার ভিন্ন হতে পারে।

দ্বি-স্তর বিশিষ্ট এই ভেরিফিকেশন বা যাচাইকরণ প্রক্রিয়ায় পাসওয়ার্ড প্রদানের পাশাপাশি আরও একটি অতিরিক্ত ধাপ পেরোতে হয় অ্যাকাউন্টে লগইন করার জন্য। অর্থাৎ প্রথমে পাসওয়ার্ড অ্যাপ্রুভ হওয়ার পর ব্যবহারকারীর ফোন নাম্বারে টেক্সট মেসেজ আকারে একটি কোড প্রেরণ করা হয়। অতঃপর এই কোডটি সাবমিট করার মাধ্যমেই অ্যাকাউন্টে লগইন করতে সক্ষম হবেন ব্যবহারকারী।

ব্যাকআপ কোড নিয়ে রাখা:

টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ফিচারটি চালু করার পর আপনার অবশ্যই উচিত জিমেইল থেকে ব্যাকআপ কোড নিয়ে রাখা। কারণ কোন কারণে আপনার ফোনটি হারিয়ে গেলে বা আপনার কাছে ফোনটি না থাকলে অথবা আপনি দেশের বাইরে অবস্থান করলে আপনার পক্ষে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন-এর দ্বিতীয় ধাপটি পেরনো সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে কাজে আসবে ব্যাকআপ কোড। টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন পেইজেই পেয়ে যাবেন এই ব্যাকআপ কোড ফিচারটি। একসাথে ১০টি করে ব্যাকআপ কোড প্রদান করে থাকে গুগল এবং একটি কোড একবারই ব্যবহার করা যায়। ১০টি কোড ব্যবহার করা হয়ে গেলে আপনি পুনরায় নিতে পারবেন আরও ১০টি ব্যাকআপ কোড।

গুগল প্রম্পট ব্যবহার করা:

অ্যাকাউন্ট সুরক্ষার আরেকটি মজার ফিচার হচ্ছে গুগল প্রম্পট। এটি আসলে একটি পুশ নোটিফিকেশন। টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে টেক্সট মেসেজের পরিবর্তে আপনি চাইলে গুগল প্রম্পট ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে কোডের পরিবর্তে আপনার ডিভাইসে একটি পুশ নোটিফিকেশন আসবে যেখানে জানতে চাওয়া হবে আপনি আপনার জিমেইল বা গুগল অ্যাকাউন্টে লগইন করতে চাচ্ছেন কিনা। আপনি স্ক্রিনে ট্যাপ করে সম্মতি জানালেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাকাউন্টে লগইন হয়ে যাবেন।

পুশ নোটিফিকেশন অপশনটি চালু করার বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করার বা হ্যাক করার চেষ্টা করলে আপনি পুশ নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। ফলে খুব সহজেই সন্দেহজনক অ্যাক্টিভিটি আপনি ব্লক করে দিতে পারবেন। এছাড়া কোন কারণে আপনার ফোন নাম্বারটি হ্যাক হয়ে গেলেও, আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে। কারণ গুগল প্রম্পট কেবলমাত্র নির্দিষ্ট একটি ডিভাইসেই পাঠানো হয়ে থাকে।

তবে মনে রাখতে হবে গুগল প্রম্পট ফিচারটি চালু থাকলে অন্য কারও ফোন থেকে সাইন-ইন করা উচিত নয়। আর একান্তই যদি করতে হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রাইভেট ব্রাউজার ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি আপনার নিজের ফোনেও স্ক্রিন লক করে রাখা উচিত যাতে করে অন্য কেউ পুশ নোটিফিকেশনের সুবিধা নিয়ে আপনার অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস বা হ্যাক করতে না পারে।

সাম্প্রতিক অ্যাক্টিভিটি চেক করা: 

আপনার গুগল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তায় সাম্প্রতিক অ্যাক্টিভিটিগুলো চেক করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার অ্যাকাউন্টের সিকিউরিটি পেজ থেকে ‘রিভিউ সিকিউরিটি অ্যাক্টিভিটি’ অপশনটিতে ক্লিক করে বিগত ২৮ দিনের অ্যাক্টিভিটি আপনি দেখে নিতে পারেন। অর্থাৎ বিগত ২৮ দিনে আপনি আপনার গুগল অ্যাকাউন্টে কবে কখন সাইন-ইন করেছেন, পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেছেন, রিকভারি ফোন ও ই-মেইল যুক্ত বা যাচাই বা পরিবর্তন করেছেন- এই সব তথ্য থেকে কোন সন্দেহজনক অ্যাক্টিভিটি চোখে পড়ে কিনা সেটা যাচাই করে নিতে পারেন।

অ্যাকাউন্টটি কোন কোন ডিভাইসে সাইন-ইন করা আছে জেনে নিন: 

আপনার গুগল অ্যাকাউন্টটি কোন কোন ডিভাইসে সাইন-ইন করা আছে সেটাও মাঝে মাঝে দেখে নেয়া উচিত। কারণ এমনটা অনেক সময়ই হয়ে থাকে যে আপনার অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে কিন্তু আপনি সেটা জানেনও না। হ্যাকার অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করে আপনার উপর নজর রাখছে বা কোন অসৎ উদ্দেশ্যে সেটি ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে আপনার অ্যাকাউন্টের সিকিউরিটি পেজ থেকে ‘রিভিউ সিকিউরিটি টিপস’ আপশনটিতে ক্লিক করলে যে পেজটি ওপেন হবে সেখানে পেয়ে যাবেন ‘ইওর ডিভাইসেস’ অপশনটি।

এবার এই অপশনটিতে ক্লিক করলেই দেখতে পাবেন কোন কোন ডিভাইসে আপনার অ্যাকাউন্টটি সাইন-ইন অবস্থায় আছে। এর মধ্যে দেখে নিন আপনার অপরিচিত কোন ডিভাইস আছে কিনা, বা এমন কোন ডিভাইস যেখানে আপনি লগ-ইন করেছিলেন কিন্তু লগ-আউট করতে ভুলে গেছেন। যদি থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই সেই ডিভাইসটি থেকে রিমোটলি সাইন-আউট করতে পারেন ‘সাইন আউট’ অপশনটি সিলেক্ট করে। তবে যদি ডিভাইসটি আপনার অপরিচিত হয়ে থাকে বা সন্দেহজনক মনে হয় সেক্ষেত্রে ‘ডোন্ট রিকগনাইজ সামথিং’ অপশনটিতে ক্লিক করে রিপোর্ট করতে পারেন।

থার্ড-পার্টি অ্যাপ্লিকেশন ও সার্ভিসগুলো রিভিউ করা:   

জিমেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে আমরা প্রায়শই বিভিন্ন থার্ড-পার্টি অ্যাপ্লিকেশন ও সার্ভিস ব্যবহার করে থাকি। আর এগুলো থেকে অনেক ক্ষেত্রে উদ্ভব হতে পারে নিরাপত্তা ঝুঁকি। ম্যালওয়্যার, ফিশিং এর মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আবার হ্যাকার বা অন্য কেউ আপনার অ্যাকাউন্টটি আপনার অগোচরে ম্যালিশিয়াস বা ঝুঁকিপূর্ণ কোন সাইট বা অ্যাপে ব্যবহার করতে পারেন। সেজন্যই কোন কোন অ্যাপ ও সাইটে আপনার অ্যাকাউন্টটি ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা মাঝে মাঝে দেখা উচিত।

গুগল অ্যাকাউন্টের সিকিউরিটি পেজের নিচে ডান দিকে পেয়ে যাবেন ‘ইওর কানেকশন্স টু থার্ড-পার্টি অ্যাপস এন্ড সার্ভিসেস’ অপশনটি। সেখানে ক্লিক করলে দেখতে পাবেন কোন কোন অ্যাপ ও সার্ভিস ব্যবহার করা হয়েছে আপনার গুগল অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করে। এর মধ্য থেকে যেগুলো অপ্রয়োজনীয় মনে হবে সেগুলোতে ক্লিক করে ‘স্টপ ইউজিং সাইন ইন উইথ গুগল’ অপশনটি সিলেক্ট করার মাধ্যমে আপনার গুগল অ্যাকাউন্টটি বিচ্ছিন্ন করে নিতে পারেন উক্ত অ্যাপ বা সাইট থেকে।