- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ১৭-১১-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১০:২১
বহুমাত্রিক ধারার গুণী শিল্পী রুনা লায়লার জন্মদিন আজ
মোদাচ্ছেরুজ্জামান মিলু►
আজ ১৭ নভেম্বর, দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার আজ জন্মদিন। জীবন্ত কিংবদন্তি এই গুণী শিল্পীর বয়স দেখতে দেখতে ৭২ বছরে চলে এলো। তাঁর খ্যাতি শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীতজগতে তিনি সমানভাবে সমাদৃত। তিনি আমাদের বাংলাদেশের একজন সম্পদ। ভিন্নধারার সুরের একচ্ছত্র দখলের মধ্যদিয়ে তিনি গোটা বিশ্বে তৈরী করেছেন কোটি কোটি ভক্ত।
তাঁর বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী এবং মা অমিতা সেন। মা ছিলেন একজন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এবং বাবা ছিলেন কাস্টমস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বিভাগের কর্মকর্তা। ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর এই গুণী শিল্পী সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। জম্মের সাথে সাথে রুনা লায়লা বেড়ে উঠতে থাকে সুরের মূর্ছনার মধ্যদিয়ে। রুনার যখন জন্ম হয় তখন বড় বোন দীনা লায়লার বযস চার বছর এবং তখন থেকেই দীনা লায়লা ওস্তাদের সান্নিধ্য পেয়ে অসাধারণ প্রতিভার মধ্যদিয়ে সুরের জগতে প্রবেশ করেন।
এদিকে রুনার মা একজন বড় মাপের শিল্পী যিনি বিদ্যাসাগর স্ট্রিটের গায়িকা ছেলেন। বিখ্যাত আরেকজন শিল্পী যে রুনা লায়লার মামা সে পরিচয় তো আমরা অনেকে জানিই না। কে এই মামা? মামার নাম সুবীর সেন যিনি ভারতের বিখ্যাত সংগীত শিল্পী। হারানো দিনের গানের খোঁজ করলে সুবীর সেনের- এত সুর আর এত গান/যদি কোনোদিন থেমে যায় -গানটি প্রথম সারিতেই চলে আসে। তাই রুনা লায়লার সংগীত পরিবার আমাদের বাংলাদেশের জন্য গর্বের, শ্রদ্ধার ও অনুকরণের পরিবার।
তাঁর জীবনী থেকে জানা যায় তিনি বাংলা, হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, বেলুচি, ফার্সি, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনিয়, ফরাসি, ইতালিয়, ইংরেজিসহ মোট ১৮টি ভাষায় প্রায় ১০ হাজারেও বেশি গান করেছেন। শুনেছি রুনার গাওয়া ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’ গানটি পাকিস্তানে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে তিনি আধুনিক, চলচ্চিত্র ও পপ গানে বেশি জনপ্রিয়।
এছাড়াও গজল গায়িকা হিসেবে তিনি গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় খ্যাতি অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই তিনি প্লেব্যাকে গান গাওয়া শুরু করেন। ভারতীয় ও পাকিস্তানি অনেক চলচ্চিত্রেও তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। এই উপমহাদেশে তার গান শোনেন নাই এমন শিল্পী নেই বললেই চলে। এই বৃষ্টিভেজা রাতে চলে যেও না, অনেক বৃষ্টি ঝরে, শিল্পী আমি শিল্পী, পাখি খাঁচা ভেঙে উড়ে গেলে, চঞ্চলা হাওয়ারে ধীরে ধীরে চলরে, যখন থামবে কোলাহল, পান খাইয়া ঠোট লাল করিলাম, আমি শিল্পী তোমাদের গান শোনাবো, ও পরাণের বন্ধুরে, নানী গো নানী, কালতো ছিলাম ভালো ইত্যাদি জনপ্রিয় গান বাঙালির জীবনে এখনও মুখে মুখে শোনা যায়। এখনও শিল্পীরা রুনার গান বিভিন্ন স্টেজে গায়।
বাংলাদেশে তিনি খ্যাতির শীর্ষে উঠে অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেছেন। সাতবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তিনি ২০১৬ সালে জিতেছেন জয়া আলোকিত নারী সম্মাননা। ভারত থেকে লাভ করেছেন সায়গল পুরস্কার, তুমি অনন্যা সম্মাননা এবং দাদা সাহেব ফালকে সম্মাননা। পাকিস্তান থেকেও তিনি সংগীতে সম্মাননা পেয়েছেন। পাকিস্তান থেকে পেয়েছেন:-নিগার পুরস্কার, কৃটিক্স পুরস্কার, দুইবার গ্রাজুয়েট পুরস্কার এবং জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক।
রুনা লায়লা একজন গায়িকা হলেও তিনি ছিলেন একজন নায়িকাও। শিল্পী নামের চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বহুমাত্রিকতার মাত্রা আরো বাড়ালেন। ১৯৯৯ সালে রুনা লায়লা চিত্রনায়ক আলমগীরের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জীবন্ত কিংবদন্তি এই গুণী শিল্পীর জন্মদিনে আমাদের ভালোবাসা থাকবে আজীবন। (তথ্যসূত্র: বিভিন্ন জার্নাল, বিভিন্ন দৈনিক ও উইকিপিডিয়া)
লেখক : ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, দৈনিক মাধুকর