- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ১৯-৩-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৫:২৩
বর-কনে পক্ষের সংঘবদ্ধ হামলা-হত্যাচেষ্টা, নিরাপত্তাহীনতায় একটি পরিবার
শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ►
প্রশাসনকে খবর দিয়ে বাল্য বিয়ে ভেঙে দিয়েছে সন্দেহে একটি পরিবারের উপর গভীর রাতে সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়ে ভাঙ্চুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে বর ও কনে পক্ষের লোকজন। এসময় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করাও হয়েছে।
গত ১৭ মার্চ দিবাগত রাতে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখুলী তহশিলদার পাড়ায় এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটানো হলেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন পদক্ষেপ না নেয়ায় হামলাকারীরা এখনও বেপরোয়া আচরণ করছেন।
ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে একটি সভ্রান্ত পরিবার। সেইসাথে এই ঘটনায় আইনী ব্যবস্থা নিলে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করাসহ মেরে ফেলে লাশ গুম করার হুমকি প্রদান অব্যাহত থাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছে। তারা সঠিক বিচার পেতে প্রশাসন, সংবাদকর্মী ও মানবাধিকার সংস্থার সহযোগীতা কামনা করেছেন।
রবিবার (১৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১২ টায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারটি এই আহ্বান জানায়।এসময় পরিবারের প্রধান মৃত বাকা উল্লাহ প্রামাণিকের ছেলে পশু চিকিৎসক মো. শমসের আলী বলেন, এলাকায় ৪ শতক জমি কবলা দলিল মূলে পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কয়া গোলাহাট আসমতুল্যাহ পাড়ার মৃত জালাল উদ্দীনের ছেলে আফজাল হোসেনের কাছ থেকে কিনেছি।
এই জমিটা স্থানীয় মৃত আফছার আলীর ছেলে ভ্যানচালক জিয়াউর রহমান জোরপূর্বক দখল করে চাটি বেড়া দিয়ে ঘর তুলে রেখেছে। এব্যাপারে উপজেলা ভূমি অফিসে অভিযোগ দিলে ইউনিয়নের তহশিলদার সরেজমিন তদন্ত করেছেন। এতে জমির জবরদখল ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়ায় তারা ক্ষুদ্ধ হয়ে আছে।
এরই মাঝে গত ১৭ মার্চ জিয়াউরের ভাই শফিকুল ইসলামের ছেলে সবুজ আলীর (১৮) সাথে একইপাড়ার মৃত মমর আলীর নাবালিকা মেয়ের বিয়ের আয়োজন করে। কে বা কারা খবর দিলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম এসে ওই বাল্য বিয়ে ভেঙে দেয় এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে।
শমসের আলীর স্ত্রী শাহানাজ পারভীন বলেন, প্রশাসন ও পুলিশ যাওয়ার পর পরই আনুমানিক রাত সাড়ে ১১ টার দিকে আঁধারের মাঝে বর ও কনে পক্ষের শতাধিক ব্যক্তি লাঠি, রড, ছোড়া, বটি, রাম দা, কুড়াল, শাবল নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা করে। এতে নেতৃত্ব দেয় জিয়াউর, তার স্ত্রী মমতা, ভাই শফিকুল, তার স্ত্রী সামসুন নাহার, ছেলে সবুজ ও রুবেল, আরেক ভাই মঞ্জু, তার ছেলে লিখন ও মাসুদ, মুকুলের ছেলে মোমিন, আমিন ও মামুন, ইকবাল হোসেন টোরা, আইয়ুব আলীর ছেলে রায়হান।
তাদের অভিযোগ আমরা প্রশাসনকে খবর দিয়ে বিয়ে ভেঙে দিয়েছি। এই হুজুগে তারা সন্ত্রাসী কায়দায় আমার বাড়ির প্রধান গেট ভেঙে আঙ্গিনায় আসে। এসময় তাদের এই সন্দেহবশতঃ অপকর্মের প্রতিবাদ করলে তারা অস্ত্র দিয়ে কোপানোর উদ্যত হয়। তখন ভয়ে আমরা সপরিবারে একটি ঘরে ঢুকে প্রাণে রক্ষা পাই। এই সুযোগে হামলাকারীরা অন্য ঘরগুলোতে ঢুকে এলোপাথাড়ি ভাঙ্চুর করে। ঘরের আলমিরাতে থাকা ব্যবসার মাল করার ২ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা, একটি সোনার চেইন, একটি বালা ও একটি আংটি লুট করে।
যাওয়ার সময় তারা ঘরের আসবাবপত্র, কাপড়, কাগজপত্র বের করে আঙ্গিনায় আগুন লাগিয়ে দেয় এবং হুমকি দিতে থাকে যে বেশি বাড়াবাড়ি করলে মেরে ফেলে লাশ এভাবে আগুনে পুড়িয়ে দিবে। পরে তারা আমরা যে রুমে ছিলাম সেই দরজায় বাহির থেকে ছিটকিনি আটকিয়ে আমাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
মুঠোফোনে এসিল্যান্ডকে ঘটনা জানালে তিনি পথিমধ্যে থেকে সঙ্গীয় পুলিশ পাঠিয়ে আমাদের উদ্ধার করেন। কিন্তু এখনও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা প্রাণনাশ ও বাড়ি থেকে উচ্ছেদের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। এতে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং প্রতিটা মূহূর্ত আতঙ্কে কাটাচ্ছি।
ভুক্তভোগী পরিবারের বড় ছেলে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী ডিপ্লোমা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাল্যবিয়ে, মাদক, জুয়াসহ বিভিন্ন অসামাজিক ও বেআইনী কাজ বন্ধে প্রশাসনকে সহযোগীতার জন্য আহবান জানাচ্ছে। খবর দিলে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিচ্ছে। যদিও আমরা বাল্য বিয়ের খবর দেইনি। তবুও সন্দেহবশতঃ এমন নৃশংস হামলার শিকার হতে হয়েছে। এখন প্রাণভয়ে একরকম অবরুদ্ধ হয়ে আছি।
সে আরও বলে, যে ব্যক্তিই প্রশাসনকে জানিয়েছে তিনি সামাজিক কাজ করেছেন। অথচ পরিণতি এমন হলে ভালো কাজে কেউ আর উৎসাহ পাবেনা। অসামাজিক কর্মকাণ্ড বন্ধে সহযোগীতা করলে প্রশাসনের সার্বিক সহায়তা করা প্রয়োজন হেতু এইক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা আশা করছি।