• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২-১২-২০২২, সময়ঃ বিকাল ০৩:১৬

চরের কাশবন যেন ওদের আর্শিবাদ



এ মান্নান আকন্দ, সুন্দরগঞ্জে  ►

প্রকৃতির আপন মহিমায় তিস্তার চরে গঁজিয়ে উঠা কাশবন যেন ওদের বেঁেচ থাকার আর্শিবাদ। তিস্তায় জমি-জিরাত খুঁয়ে যাওয়া হাজারও  পরিবার বছরের ছয় মাস কাশবনের কাশিয়া (ছন) বিক্রি করে সংসার চালায়। কষ্ট যেন ওদের নিত্য দিনের সঙ্গী। তারপরও ওরা থেমে নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মিশে গিয়ে সারা বছর বেঁচে থাকার লড়াই করে চরের ভুমিহীন পরিবারগুলো।

  সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া, চন্ডিপুর, বেলকা, তারাপুর, হরিপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার চরের কাশবনের কাশিয়া বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে হাজারও ভুমিহীন পরিবার । পানের বরজ ছাউনির প্রধান উপকরণ হিসেবে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাহিরে কাশিয়া রপ্তানি করছে ব্যবসায়ীরা। দূর্গম চরবাসির একমাত্র আয়ের উৎসহ হচ্ছে কাশিয়া। তিস্তার ধূ-ধূ বালুচর শরৎতের কাশবনে ঢেকে গেছে। প্রতিবছর নভেম্বর হতে মার্চ মাস পর্যন্ত চরবাসি প্রকৃতির আপন মহিমায় গঁজিয়ে উঠা কাশিয়া কেটে বিক্রি করে থাকেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তা ক্রয় করে নদীর ধারে শুকিয়ে রপ্তানি করেন জেলার বাহিরে।  

 কথা হয় উপজেলার হরিপুর চরের ফরমান আলীর সাথে। তিনি বলেন তিস্তায় বিলীন হয়ে যাওয়া তার ৩বিঘা জমি জেগে উঠেছে। এখন পর্যন্ত পরোপুরি চাষযোগ্য হয়ে উঠেনি। গঁজিয়ে উঠা কাশিয়া বিক্রি করছে কয়েক বছর ধরে।  গত বছর আড়াই লাখ টাকার কাশিয়া বিক্রি করেছে তিনি। চলতি বছরও দেড় লাখ হতে ২ লাখ টাকার কাশিয়া বিক্রি হতে পারে। বর্তমান বাজারে একশত আটি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার হতে ৪ হাজার টাকায়।

হরিপুর চরের আব্দুর রাজ্জাক জানান, চরে তার কোন জমি নেই। চরের কাশিয়া কেটে নিয়ে নিয়ে তা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। প্রতিদিন বিভিন্ন চরে ঘুরে ফিরে কাশিয়া সংগ্রহ করে। তার পর সেই কাশিয়া ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে চাল ডাল কিনে সংসার চালায়। তিনি বলেন চরের কাশবন যেন আমাদের বেঁচে থাকার আর্শিবাদ।

স্থানীয় খড় ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম জানান, তিনি দশ বছর ধরে কাশিয়া খড় বিক্রি করে থাকেন। চরের কৃষকদের নিকট থেকে খুচরা কিনে নিয়ে এসে নদীর ধারে জমা রেখে ট্র্যাক ও টলি যোগে জেলার বাহিরে রপ্তানি করে। পানের বরজের ছাঁউনি, ঝাড়–, বিনোদন পার্কের গোল ঘরের ছাউনি, ঘরের বেড়া দেয়ার উপকরণ হিসেবে কাশিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একশত আটি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার হতে চার হাজার হাজার টাকা পর্যন্ত।   

হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ার মোজাহারুল ইসলাম জানান, সব চরে কাশিয়া খড় হয় না। দূর্গম চরে কাশিয়া গঁজিয়ে উঠে। তবে প্রকৃত জমির মালিকরা অনেক সময় কাশিয়া বিক্রি করতে পারে না। স্থানীয় ভুমিহীন পরিবার গুলো কাশিয়া বিক্রি করে থাকেন। হাজারও পরিবার কাশিয়া বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে ।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাশিদুল কবির জানান, চরাঞ্চলে বর্তমানে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে কাশিয়া  রয়েছে। অর্থকারি ফসল হিসেবে চরের কৃষকদের একমাত্র অবলম্বন কাশিয়া। তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষকদের জন্য অপার সম্ভাবনার কান্ডারি হয়ে দাড়িছে।