• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৩-১২-২০২২, সময়ঃ বিকাল ০৪:৩৩

কুঁড়েঘর



কঙ্কন সরকার ►

আজ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময়ের অতি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান কুঁড়েঘর। ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগেও গ্রামাঞ্চলের বাড়ি বলতেই ছিল কুঁড়েঘর এ সাজানো বাড়ি। এমনকি শহরেও অনেক দেখা যেত কুঁড়েঘর। সময়ের প্রয়োজনে এ ঘর এখন বিলুপ্তপ্রায়। অবশ্য কোথাও কোথাও দুএকটা কালেভদ্রে দেখা যায় এখনো।

এ ঘরের চালের স্থায়িত্ব কম হওয়া, প্রতিবছর ছাওয়ানো ও মেরামতে খরচ লাগা, উপকরণের অপ্রতুলতা, অন্যদিকে উন্নত ও দীর্ঘস্থায়ী প্রযুক্তি পাওয়া সহজীকরণ, মানুষের রুচির পরিবর্তন, আর্থসামাজিক অবস্থানের পরিবর্তন, এসব এর কারণে এখন কেউ আর কুঁড়েঘর তৈরি করে না। বরং যা আছে তাও সময় ও অবস্থা বুঝে ভেঙ্গে ফেলছে অথবা মেরামত বিহীন অবস্থায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কুঁড়েঘর এর অঞ্চল ভেদে আরও নাম রয়েছে-কুটির, খড়ের ঘর, খেড়ি ঘর, কাঁচা ঘর, শনের ঘর, ছনের ঘর ইত্যাদি। কুঁড়ে ঘর তৈরিতে বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে বাঁশ ও খড়ই প্রধান। চালা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ধানের খড়, গমের খড়, আখের পাতা, কাশের খড়, গোলপাতা, বাঁশপাতা, ভূট্টা পাতা ইত্যাদি।

কোনো কোনো বাড়িতে দোচালা কিংবা চারচালার কুঁড়েঘর দেখা যেত। দোচালা কুঁড়েঘরকে বাংলা ঘরও বলা হত। অন্যদিকে চারচালা ঘরকে বলা হত চৌয়ারি বা চুয়ারি ঘর। তবে গোলাকার আকৃতির চালাও দেখা যেত ও এখনো দেখা যায়। চালা তৈরিতে প্রথমে খড়ের আঁটি বা বোঝা বা গোছাগুলিকে সুন্দর রূপে ঝেড়েঝুড়ে ঝকঝকে করে উপযোগী করা হয়। এরপর বাঁশের বাতি (কাবাড়ি/ চ্যাবাড়ি) লাগিয়ে তার ওপর তায়ে তায়ে খড় রেখে চিকন রশি (সুতলি/ তাতুয়া/ বাটি) দিয়ে বেঁধে বেঁধে খড় ছাওয়ানো হয়। অবশ্য সবাই ঘর ছাওয়ানোর কাজ করতে পারে না।

যারা এসব ছাওয়ানোর কাজ করত তাদেরকে ছাকরবানধ/ ছাকরবাইন্ দ বা ঘরকামলা বলা হয়। আর ছাওয়ানোর কাজে সুতলি বের করা ও ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি বাঁশের বা লোহার উপকরণ ব্যবহার  করা হয়। যেটি অনেকটা খাতা বা বই সেলাইয়ের বড় সুঁই বা মল বা ফোড়নার মত। আর উপকরণটির নাম সুস্ স্যা। কোনো কোনো সৌখিন কিংবা অবস্থাপন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন আকারের নকশা সাজিয়ে এ ঘর তৈরি করত। কুঁড়েঘর একবার ছাওয়ালে সর্বোচ্চ দুই বা তিন বছর ব্যবহার উপযোগী থাকে। তবে বৃষ্টি ও ইঁদুরও এ ঘরের শত্রু।

বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে পচে অন্যদিকে ইঁদুর সুযোগ পেলে কেটেকুটে এর আয়ু কমিয়ে আনে। কুঁড়েঘরের স্থায়ীত্ব যত কমই হোক এর ভিতরটা কিন্ত খুব আরামের জায়গা। গরমের সময় গরম অনুভূত কম হয় আবার ঠাণ্ডার দিনে বেশ উষ্ণতা অনুভব হয়। তবে আজকাল এ ঘর বিলুপ্তি হয়ে গেলেও শখ করে কিংবা স্টাইল এর জন্য পার্ক, পিকনিক স্পট, কম্যুনিটি সেন্টার, রেস্টুরেন্ট  ইত্যাদি স্থানে কুঁড়েঘর বানিয়ে রাখে কেউ কেউ।

আবার কেউ কেউ বাড়ির ছাদেও তৈরি করে রাখে। অন্যদিকে আজকাল বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ফাঁকা স্থানে কিংবা ফসলের মাঠের আলের পাশে কুঁড়ে ঘর তৈরি করে রাখা হয় । কুঁড়েঘর নিয়ে কবিতা আছে, গল্প আছে। আছে প্রকাশনা কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নাম। আবার রাজনৈতিক বা নির্বাচনের মার্কা হিসেবে কুঁড়েঘরের ছবির ব্যবহারও আছে।
লেখক ও সংগঠক, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা