• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৩-৫-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৯:৩৭
  • ৫৪ বার দেখা হয়েছে

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সংকটের আশঙ্কায় আ. লীগ

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সংকটের আশঙ্কায় আ. লীগ

মাধুকর ডেস্ক ►

বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না মতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ধরনের দ্বন্দ্ব চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে দলের জন্য সংকট তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে ঐক্যের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নীতিনির্ধারক নেতারা বারবারই অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দূর করার তাগিদ দিয়ে আসছেন। 

বিভিন্ন স্থানে বিবাদে জড়ানো গ্রুপগুলোর নেতাকর্মীদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দূর করতে চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ও অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরও দ্বন্দ্ব থেকে সংঘাত ও হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে ব্যক্তি স্বার্থ। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও এ কথা বলছেন। এই ব্যক্তি স্বার্থ বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে দলের মধ্যে বা এলাকায় নিজের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে। এ থেকেই গ্রুপিং তৈরি হচ্ছে। আর নিজে বা নিজ নিয়ন্ত্রিত গ্রুপের এই প্রভাব প্রতিষ্ঠার সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়ও জড়িত রয়েছে। 

সম্প্রতি আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ রাজনৈতিক সহিংসতায় ৬ জন নিহত এবং এক হাজারের বেশি লোক আহত হয়েছেন। এসব সহিংসতার বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে সংঘটিত হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।  
গত ৩০ এপ্রিল কুমিল্লার দাউদকান্দিতে নিহত হন তিতাস উপজেলা যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন। নিহতের পরিবার তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা শাহিনুল ইসলাম ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে এই হত্যাকা-ের অভিযোগ করেছে। গত ২৪ এপ্রিল রংপুরের কাউনিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সোনা মিয়া নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হন।

গত ১৯ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা যুব লীগের সাবেক শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ও শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর খায়রুল আলমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেসবাউল হক টুটুল ও তার কয়েকজন সসহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহতের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে আহতও হচ্ছেন অনেকে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। দীর্ঘদিন দল মতায় রয়েছে, অনেকেই মতার প্রভাব খাটাতে চায়। এ কারণে দলের মধ্যে গ্রুপিং ও দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে এবং কোথাও কোথাও তা সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়াচ্ছে। 

বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলে এই দ্বন্দ্ব বড় হয়ে দেখা দেয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্বও সংঘাত তৈরি করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে তৃণমূলের এই দ্বন্দ্ব-সংঘাত যাতে নির্বাচনে দলের জন্য সংকট তৈরি করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও আওয়ামী লীগের ওই নেতারা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, এগুলো আমরা দেখতে চাই না। তারপরও কোথাও কোথাও কোন্দলের কথা শুনি। দেশে ১৭ কোটি মানুষ, আওয়ামী লীগ বড় দল এসব কারণে কিছু কিছু অনাকাঙ্তি ঘটনা ঘটে যায়। আমরাও খোঁজ-খবর পাই, আমরা চেষ্টা করছি এই সমস্যাগুলো দূর করার। 

তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা দলের তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। কর্মীদের বুঝতে হবে দলের হাইকমান্ড কী চাচ্ছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন যাতে হয়, সব দল যাতে নির্বাচনে অংশ নেয়, সেটাই আমরা চাই। এটিই আমাদের দলের সভাপতির বার্তা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল হয় না বলছি না, কোথাও কোথাও হয়। আসলে এগুলো ব্যক্তিগত, ব্যক্তিস্বার্থের দ্বন্দ্ব, আদর্শগত দ্বন্দ্ব না। ব্যক্তিগত রেষারেষি থেকে এগুলো ঘটে থাকে। কিন্তু তারপরও আমরা সঙ্গে সঙ্গে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে কোথাও গ্রুপিং না থাকে। সব কিছুই মনিটর করা হয়, কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না। অনেক বড় নেতা, জনপ্রিয়, মতাশালী হওয়া সত্ত্বেও দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়