Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • ৫ ঘন্টা আগে
  • ৫৮ বার দেখা হয়েছে

‘শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু’ নামে হরিপুর-চিলমারী সেতুর নামকরণের দাবি

‘শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু’ নামে হরিপুর-চিলমারী সেতুর নামকরণের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক►

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতুর নামকরণ এই সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা ও আন্দোলনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা শরিতুল্যাহ মাস্টারের নামে করার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। 

আজ (রবিবার, ২০ জুলাই) দুপুরে জেলা শহরের ডিবি রোডে গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (গানাসাস) সামনে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু নামকরণ বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর এবং কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মধ্যে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটি বাস্তবায়ন করা ছিল অসাধ্য একটি কাজ। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ শরিতুল্যাহ মাস্টার। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি একাই এই সেতুর জন্য আওয়াজ তোলেন এবং দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তৎকালীন সময়ে মানুষের উপহাস সত্ত্বেও তিনি এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা আরও বলেন, তিস্তা নদীর ওপর সেতু না থাকায় এই অঞ্চলের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। শরিতুল্যাহ মাস্টার সেই সমস্যা উপলব্ধি করে তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেন এবং জনগণের কাছে সেতুর যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রম, নেতৃত্ব এবং গণজোয়ার সৃষ্টির মাধ্যমে অবশেষে এই সেতু আলোর মুখ দেখেছে। এটি শুধু তিস্তার দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগ সহজ করেনি, বরং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

বক্তারা দৃঢ়ভাবে বলেন, এই সেতু নির্মাণের পেছনের মূলশক্তি ছিলেন শরিতুল্যাহ মাস্টার। এটি কেবল একটি সেতু নয়, এটি তার ৩০ বছরের আত্মত্যাগ ও স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। তার এই অবিস্মরণীয় অবদানকে সম্মান জানাতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তার স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে, এই সেতুর নামকরণ ‘শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু’ করা হোক।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু নামকরণ বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক শামীম মন্ডল, সদস্য সচিব শাহীন মিয়া, স্কুল শিক্ষক শরিফুল ইসলাম, ব্যবসায়ী জিল্লু হাকিম, হালিম মিয়া, ডা. ফুয়াদ ইসলাম, শিক্ষার্থী রত্ন প্রমুখ। 

মানববন্ধন থেকে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা শরিতুল্যাহ মাস্টারের এই অবিস্মরণীয় অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে তার নামেই যেন নবনির্মিত সেতুর নামকরণ করা হয়। এলাকাবাসী বিশ্বাস করে, এতে শরিতুল্যাহ মাস্টারের স্বপ্ন ও আত্মত্যাগ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার দেশপ্রেম ও জনসেবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হবে। পরে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা বরবার দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কাছে প্রদান করে। 

উল্লেখ্য, দেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডির সবচেয়ে বড় প্রকল্প এই হরিপুর-চিলমারী দ্বিতীয় তিস্তা সেতু। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর এই প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল এবং চীনা প্রতিষ্ঠান ‘চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড’ এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। সেতুটি উন্মুক্ত হলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ১৩৫ কিলোমিটার। এতে সময় সাশ্রয় হবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। শুধু গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম নয়, উত্তরাঞ্চলের আরও কয়েকটি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে যাবে। মূল সেতুর কাজ শেষ। কিছু সংযোগ সড়ক ও বিদ্যুৎসংযোগের কাজ বাকি। আগামী ৫ আগস্ট সেতু চালুর কথা রয়েছে। সেতু চালুর পর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি এ অঞ্চলে নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে, কর্মসংস্থান বাড়বে।

মানববন্ধনে অংশ নেয়া কলেজ শিক্ষক আনোয়ার জাহিদ শরিতুল্যাহ মাস্টারের অবদানের কথা তুলে ধরে জানান, তিনি শুধু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শিক্ষাবিদই ছিলেন না, বরং একজন সমাজ সংস্কারক ও এলাকার উন্নয়নের পথপ্রদর্শকও ছিলেন। তিস্তা নদীর ওপর সেতু না থাকায় এই অঞ্চলের মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ ছিল। এই দুর্ভোগ লাঘবের জন্য শরিতুল্যাহ মাস্টার আন্দোলন শুরু করেন। শুরুতে অনেকেই তার কথায় আস্থা রাখতে পারেননি, এমনকি তাকে উপহাসও করা হয়েছে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। ‘তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং সরকারের কাছে এই সেতুর যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তার নিরলস প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বেই হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতু আলোর মুখ দেখেছে, যা দীর্ঘ ৩০ বছর পর ২০২৫ সালে এসে বাস্তবায়িত হয়েছে।

কর্মসূচি চলাকালে গ্রাফিক্স ডিজাইনার আশিকুর রহমান ইমন বলেন, শরিতুল্যাহ মাস্টারের এই সংগ্রামে কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল না। তার স্বপ্ন ছিল এই এলাকার মানুষের চলাচলের স্বাধীনতা, সন্তানদের স্কুলে পৌঁছানো সহজ করা এবং অসুস্থ রোগীদের সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। তার প্রচেষ্টা ছিল এই এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad